সফল হতে শুধু পরিশ্রম নয় , দরকার কৌশলও
আমরা অনেকেই জীবনে এমন মানুষকে দেখে থাকি—যারা অন্যকে ঠকায়, নিজের স্বার্থে কাজ করে, আবার সেই মানুষটাই টাকা, ক্ষমতা আর মর্যাদায় ওপরে উঠে যায়। অন্যদিকে, যারা সৎ, পরিশ্রমী আর দয়ালু, তারা অনেক সময়েই অবহেলিত থেকে যান। এই বিষয়টা অনেককে হতাশ করে। মনে হয়, ভালো থাকার কোনো মূল্যই নেই।
তবে বিষয়টা এতটা সোজা নয়। সব খারাপ মানুষই সফল হয় না, আর সব ভালো মানুষই ব্যর্থ হয় না। কিন্তু একটা জিনিস চোখে পড়ে—অনেক সময় মন্দ মন মানসিকতার মানুষরা যেন দ্রুত এগিয়ে যায়। এটা কেন হয়? আর এর মধ্যেও ভালো থেকে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব? চলুন, জেনে নিই।
প্রথমেই বলে রাখা দরকার, সব ‘খারাপ’ মানুষ সফল নয়, আর সব ‘ভালো’ মানুষ ব্যর্থ। তবে একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে, যা আমাদের ভাবায়, এটা কিভাবে হচ্ছে ? রবার্ট গ্রিনের ‘দ্য ফোরটি এইট ল’স অব পাওয়ারস’ বইয়ে বলা হয়েছে, যারা ওপরে ওঠে তারা প্রয়োজনে নিয়ম ভাঙে, চেহারা পাল্টায় এবং সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করে না। বাস্তব জীবনেও এমনটাই দেখা যায়। ‘খারাপ’ মানুষদের সীমাবদ্ধতা কম থাকে।
তারা নিয়ম ভাঙতে ভয় পায় না। তারা ভাবেও না, এটা কি ন্যায্য ? আর ‘ভালো’ প্রতিটি কাজ করার আগে বিবেকের বিচার করে। যেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়, কিন্তু এতে তারা পিছিয়েও পড়ে।
আত্মবিশ্বাস বনাম দ্বিধা
‘খারাপ’ মানুষরা সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী ভাব ধরে। তারা জোর দিয়ে নিজের কথাগুলো বলে, ফলাফল নিয়ে বেশি চিন্তা না করে পদক্ষেপ নেয়।
অন্যদিকে ‘ভালো’ মানুষরা চুপচাপ কাজ করে, আশা করে কেউ একদিন তা দেখে বুঝবে। দুঃখজনকভাবে, বাস্তবতা হলো যদি আপনি নিজেকে তুলে ধরেন না, খুব কম লোকই আপনার কদর করবে। আর যারা সাহস করে, নিজের গুরুত্ব বোঝায়, তাদেরকেই সুযোগ দেওয়া হয়। অ্যাডাম গ্রান্ট তার ‘গিভ এন্ড টেইক’ বইয়ে মানুষকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন: (দাতা) — যারা আগে অন্যের কথা ভাবে, (গ্রহীতা) — যারা সবসময় নিজের লাভ খোঁজে, (মধ্যপন্থী) — যারা ভারসাম্য রাখে। ‘ভালো’ মানুষরা সাধারণত দাতা হয়। তারা সাহায্য করে, বিনিময় চায় না। কিন্তু এই পৃথিবী প্রায়শই উচ্চস্বরে বলার লোকদেরই পুরস্কৃত করে।
নেটওয়ার্কিং ও পরিচিতির খেলা
আপনি লক্ষ্য করবেন, অনেক প্রভাবশালী কিন্তু নীতিহীন মানুষ প্রচুর মানুষের সঙ্গে মিশে, নেটওয়ার্ক তৈরি করে। তারা জানে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে কী সুবিধা পাওয়া যাবে। ‘ভালো’ মানুষরা প্রায়শই এই রাজনৈতিক খেলায় অংশ নিতে চায় না। তারা ভাবে, আমি তো সৎভাবে কাজ করছি, নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তা বুঝবে। শুধু কঠোর পরিশ্রম নয়, ঠিক মানুষদের সঙ্গে সংযোগই অনেক সময় সফলতার মূল চাবিকাঠি।
ঝুঁকি নেওয়ার সাহস
‘খারাপ’ লোকেরা ঝুঁকি নিতে ভয় পায় না। তারা অযোগ্য হয়েও পদোন্নতির জন্য আবেদন করে, সাহস করে ব্যবসা শুরু করে, ব্যর্থ হলেও উঠে দাঁড়ায়। ‘ভালো’ মানুষরা সাবধানী হয়, অন্যকে কষ্ট না দেওয়ার চিন্তায় নিজেদের সুযোগ হাতছাড়া করে। কিন্তু সবসময় নিরাপদে খেললে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। শেরিল স্যান্ডবার্গের ‘লিন ইন’ বইতে বলা হয়েছে—বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে, ভালো হওয়াটা অনেক সময় দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। বন্ধুরা ধরে নেয়, আপনি সবসময় পাশে থাকবেন। কিন্তু যারা সীমানা নির্ধারণ করতে পারে, তাদেরকেই সম্মান দেওয়া হয়।
তবে এটা মানে নয় যে ভালো হওয়াটা ভুল। বরং শেখার দরকার—কিভাবে ভালো থেকেও কৌশলী হওয়া যায়।
যেভাবে ‘ভালো’ মানুষরা নিজেদের অবস্থান ফেরাতে পারে ?
১। নিজের সাফল্যের কথা বলুন – অপেক্ষা না করে, অন্যদের জানান আপনি কী অর্জন করেছেন।
২। না বলা শিখুন – দয়া দেখান কিন্তু নিজের সীমা নির্ধারণ করুন।
৩। উদ্দেশ্যমূলক নেটওয়ার্ক গড়ুন – বন্ধুত্ব নয়, কৌশলী সম্পর্ক তৈরি করুন।
৪। ঝুঁকি নিতে ভয় পাবেন না – কিছু চেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাতে শিক্ষা থাকে।
৫। আত্মবিশ্বাসী হন – নিজেকে ছোট করে দেখাবেন না।
‘খারাপ’ মানুষদের পথ হয়তো শুরুতে সহজ মনে হয়। কিন্তু সেটা সবসময় টিকে থাকে না। তারা হয়তো অনেক কিছু পায়, কিন্তু হারায় সম্মান, সম্পর্ক, কিংবা মানসিক শান্তি। ‘ভালো’ মানুষদের যাত্রা ধীর হতে পারে, কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্থায়ী সাফল্য গড়ে তোলে। জীবন সহজ না—তবে আপনি যদি বুঝে খেলেন, ভালো থেকেও জিততে পারেন।
No comments