যে ব্যায়ামে কমবে ক্যানসারের ঝুঁকি
ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর উপায় হিসেবে স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া ও ধূমপান ত্যাগ করা ইত্যাদির যেমন গুরুত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনই ব্যায়ামও এখানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু কীভাবে ক্যানসার প্রতিরোধে নিয়মিত শরীরচর্চা উপকার করে, সে বিষয়টি জানেন কি?
এ বিষয়ে এডিথ কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে— রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং এবং হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিংয়ের একটি সেশনই শরীরকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তি জোগাতে পারে। গবেষক ফ্রান্সেস্কো বেত্তারিগার বলেছেন, শরীরচর্চার একটি মাত্র সেশনই মায়োকাইনসের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। আর এই মায়োকাইনস হলো এমন এক প্রকার প্রোটিন, যা ব্যায়ামের সময় পেশি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি ক্যানসারবিরোধী বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
গবেষকের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, এই প্রোটিনগুলো ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি সম্ভবত ২০-৩০ শতাংশ ধীর করতে পারে। একদফা ব্যায়ামই ক্যানসার কোষের বৃদ্ধির গতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর করে দিতে পারে।
গত জুলাই মাসে এক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘পাবমেড’-এ ব্রেস্ট ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড ট্রিটমেন্টের জার্নালে। এ ধরনের ব্যায়ামের জন্য জিম অপরিহার্য নয়। বেত্তারিগার বলেন, স্তন ক্যানসারজয়ী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাদের রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং বা হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে বলা হয়। ব্যায়ামের ঠিক আগে ও পরে এবং ফের আধ ঘণ্টা বাদে তাদের শরীরে ক্যানসাররোধী মায়োকাইনসের মাত্রা মাপা হয়। সেখানে দেখা যায়, শরীরচর্চার পর সেই মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখান থেকেই গবেষকরা সিদ্ধান্তে এসেছেন— স্তন ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হওয়া নারীদের মধ্যে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি কমাতে পারে এ ধরনের ব্যায়াম।
দেখা গেছে, রেজ়িস্ট্যান্স ট্রেনিং বা হাই-ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং— দুই-ই এমডিএ-এমবি-২৩১ কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে, যা ক্যানসারের ফিরে আসার ঝুঁকি কমায়। এর থেকেই বোঝা যায়, ক্যানসাররোধী চিকিৎসা হিসেবে এ ব্যায়াম কার্যকরী হতে পারে। যে হরমোনের জন্য স্তন ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হয়, তা প্রতিরোধ করা সম্ভব শরীরচর্চার সাহায্যে।
কলকাতার ক্যানসার রোগ চিকিৎসক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, কেবল স্তন ক্যানসার বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার নয়, ব্যায়াম করলে কোলন ক্যানসারেরও ফেরত আসার ঝুঁকি কমে যায়। গত মাসেই আমেরিকার শিকাগোতে আয়োজিত বিশ্ব ক্যানসার কনফারেন্সে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল।
সেখান থেকে জানা যায়, স্টেজ ২ এবং স্টেজ ৩ কোলন ক্যানসারের রোগীদের অপারেশন ও কেমোথেরাপি দেওয়ার পর একটি দলকে সাধারণ জীবনযাপন করতে বলা হয়। অন্য দলকে নিয়মিত ব্যায়াম, শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে যেতে বলা হয়। দেখা যায়, প্রথম দলের তুলনায় দ্বিতীয় দলের রোগীদের ক্ষেত্রে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি অনেকখানি কমে এসেছে। তাই এখন কোলন ক্যানসার রোগীদের নিয়মিত শরীরচর্চা করতে বলা হচ্ছে। শুধু কোলন ক্যানসার নয়, একাধিক ক্যানসারের ঝুঁকিই কমাতে পারে প্রতিদিনের নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চায়।
No comments