গুমের অপরাধী সিন্ডিকেট এখনো বিচারের বাইরে
বলপূর্বক গুমের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্তত ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোয় এমন অপরাধী বেশকিছু কর্মকর্তা এখনো ‘ইন সার্ভিসে’ রয়ে গেছেন। তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা সত্ত্বেও কোনো কাজ হয়নি। এমনকি চিহ্নিত এই অপরাধীদের বাধ্যতামূলক অবসরে পর্যন্ত পাঠানো হচ্ছে না। ফলে গুমের বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।
গুমের তদন্ত, অনুসন্ধান ও বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) থেকে ১১ জন অবসরপ্রাপ্ত ও এলপিআরে থাকা জেনারেল ও সিনিয়র পর্যায়ের সেনাকর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের পাসপোর্ট বাতিল করেছিল। একজন ছাড়া বাকি ১০ জন ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টেই ছিলেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা হয়নি। কয়েকমাস আগে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে নিরাপদে ভারতসহ অন্যান্য দেশে পালিয়ে গেছেন।
পতিত শেখ হাসিনার শাসনামলে (২০০৯-২০২৪) বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মদতে সংঘটিত গুম এক বিভীষিকায় পরিণত হয়। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, ওই সময় তিন হাজার ৫০০ ব্যক্তিকে গুম করা হয় (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ)। এদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, বিভিন্ন পেশাজীবী, সাংবাদিক এবং অন্যান্য নিরীহ ব্যক্তি। গুম কমিশনে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০ জনের গুমের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কমিশনের মতে, এখনো নিখোঁজ ২১১ জন হয়তো আর কখনোই ফিরে আসবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) ও গুম কমিশনের অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গুমের ‘সুপিরিয়র কমান্ড’ ছিলেন শেখ হাসিনা স্বয়ং। তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ছিলেন গুমের ‘মাস্টারমাইন্ড’।
নির্দেশদাতাদের অন্যতম ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আর গুম-খুনের ভয়ঙ্কর ব্যক্তিটি ছিলেন সেনাকর্মকর্তা মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান। গুম-খুনের বর্বরতায় জিয়াউল আহসান কুখ্যাত নায়ক ও নৃশংসতার প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিজ হাতে খুন করার সময় তিনি ভিকটিমের মাথার কাছে অস্ত্র নিয়ে গুলি করতেন। কারণ গুলির পর ভিকটিমের ছিটকে আসা গরম রক্ত ও মগজ শরীরে পড়লে তিনি এক ধরনের ফিলিংস অনুভব করতেন।
জিয়াউল আহসান কতটা ভয়ংকর ও অমানবিক ছিলেন তার আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, তিনি কীভাবে খুন করেন তার একটি ঘটনা স্ত্রীকে দেখানোর জন্য ঘটনাস্থল বরিশালের এক নদীতে নিয়ে গিয়েছিলেন। গুম হওয়া ব্যক্তিকে রাতে ওই নদীতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় এবং তার স্ত্রী এই নৃশংস হত্যার দৃশ্য উপভোগ করেন। শেখ হাসিনার খুবই ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন ছিলেন জিয়াউল আহসান। জাহাঙ্গীর কবির নানকের মাধ্যমে তিনি হাসিনার প্রিয়ভাজন হন। নানক তাকে দিয়ে দুটি খুন করিয়েছিলেন। এরপর হাসিনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাকে দিয়ে যা ইচ্ছা তা করানো যাবে, তাই হাসিনা তাকে কাছে টেনে নেন। সপ্তাহে একদিন গণভবনে গিয়ে তিনি হাসিনার সঙ্গে খাবার খেতেন।
গুম কমিশন থেকে জানা গেছে, গুমের ঘটনায় প্রধান ভূমিকা ছিল রাষ্ট্রের ৫টি নিরাপত্তা সংস্থার। এগুলো হলোÑ র্যাব, পুলিশ, ডিবি, সিটিটিসি ও এনটিএমসির। এছাড়া জড়িত ছিল সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের বিরুদ্ধেও গুমে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। গুম করে ভিকটিমদের গোপন বন্দিশালা আয়নাঘরে বন্দি করে রাখা হতো।
তাদের ওপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। গুম করে অনেককেই নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে এবং লাশের চিহ্ন যাতে পাওয়া না যায় সেজন্য পেট ফেড়ে ইট-বালু ভরে কিংবা ভরা সিমেন্টের বস্তার সঙ্গে বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বরিশালের কয়েকটি নদী এবং সুন্দরবনের নদী হয়েছে অনেক লাশের ঠিকানা। কমিশনের তথ্যে উঠে এসেছে গুম হওয়া বহু ব্যক্তির নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা। তাদের অস্বাস্থ্যকর সেলে বন্দি রাখা, গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া, ঘূর্ণায়মান চেয়ারে বসিয়ে নির্যাতন, উল্টো করে ঝুলিয়ে মারধর, ঠোঁট সেলাই ইত্যাদি বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন করা হতো।
গুম কমিশনের রিপোর্ট থেকে আরো জানা যায়, ডিজিএফআইর জেআইসি এবং র্যাবের টিএফআই সেল ছিল মূল আয়নাঘর। দেশব্যাপী এমন অসংখ্য গোপন বন্দিশালা বা আয়নাঘরের সন্ধান পেয়েছে কমিশন। তাদের পক্ষ থেকে সারা দেশের এমন ১৪টি আয়নাঘর পরিদর্শনও করা হয়েছে। কমিশন সেগুলো যেভাবে আছে সেভাবে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আরও জানা গেছে যে, গোপন বন্দিশালায় এমন ব্যক্তিরাও দেখা করতেন যারা হিন্দিসহ অন্যান্য বিদেশি ভাষায় কথা বলতেন। গুম করে অনেক ভিকটিমকে সীমান্তের ওপারে ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেয়া হয়েছে।
গুম কমিশন তাদের অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, গুমের ঘটনায় সেনাবাহিনী প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দায়ী নয়। তবে তারা গুমের ঘটনা জানতো না, এটা বলার সুযোগ নেই। কারণ সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন যে, দুইজন সেনা সদস্য তার কাছে আশ্রয় চেয়েছেন, তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে চান না। গুম কমিশন ১,৮৫০ জনের গুমের অভিযোগ পর্যালোচনা করে ২৫৩ জনের একটি তথ্যভিত্তিক দলিল তৈরি করেছে যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুম হয়েছিলেন।
এক দশকের বেশি সময় ধরে তারা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কিন্তু তারা অভিজ্ঞতার যে কাহিনি গুম কমিশনকে পৃথকভাবে বর্ণনা করেছেন, তা অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। এমন ঘটনা কাকতালীয় হওয়া সম্ভব নয়। এমনকি হাতেগোনা কিছু অবাধ্য কর্মকর্তার বিচ্ছিন্ন অপরাধও হতে পারে না। গুমের এসব ঘটনা একটি সাংগঠনিক ও পদ্ধতিগত কাঠামোর অস্তিত্ব নির্দেশ করে।
এত মানুষ গুম করার কারণ কী? গুম কমিশন, আইসিটি ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা চরিতার্থ, আওয়ামী লীগের সমালোচনাকারীদের দমন, জামায়াত-শিবির দমন, বিএনপির পটেনশিয়াল নেতাদের শেষ করে দেওয়া, ভারতবিরোধী লোকদের দমন এবং মাদরাসা ও ইসলামের পক্ষের আলেম-ওলামা যাতে কোনো ধরনের অবস্থান সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য জঙ্গি তকমা দিয়ে গুম করে দমন করাই ছিল উদ্দেশ্য।
গুম কমিশন থেকে আরো জানা গেছে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চার ধরনের পরিণতি হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে গুম হওয়া ভিকটিমকে হত্যা করা, বিচারের আগেই ভিকটিমকে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপনা করে জঙ্গি তকমা দিয়ে ফৌজদারী মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো, ভিকটিমকে সীমান্ত পার করে ভারতের পাঠিয়ে ভারতীয় বাহিনীর মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা এবং ভিকটিমের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে খুব অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেয়া।
বাহিনীগুলোতে গুমের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা
রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোতে এখনো গুমের সঙ্গে জড়িতরা অপরাধীরা রয়ে গেছেন। এদের চিহ্নিত করে আইসিটি ও গুম কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছে। কিন্তু তারা সেখানে বহাল তবিয়তে আছেন। অনুসন্ধানে অনেকের নাম জানা গেছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনী গুমে জড়িত ছিল না। কিন্তু সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তা র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি ও সিটিটিসিতে প্রেষণে থাকাকালে গুমে ভয়াবহভাবে জড়িয়ে পড়েন। তেমনি গুমের অপরাধী কর্মকর্তারা র্যাব, পুলিশ, বিজিবিতে রয়েছেন।
সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন প্রধানরা অবসর নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। জড়িতদের মধ্যে মেজর জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তানভীর মাযহার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল সরওয়ার মোস্তফা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, কর্নেল মাহবুব আলম, কর্নেল মোমেন, লে. কর্নেল সরওয়ার বিন কাশেম (র্যাব ইন্ট.), লে. কর্নেল মশিউর রহমান, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন উল্লেখযোগ্য। নৌবাহিনীর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহাইয়েল অপহরণ ও গুম খুনে জিয়াউল আহসানের মতোই ছিলেন দুর্ধর্ষ। তিনি বর্তমানে জেলে আছেন।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান গুমে জড়িত এক দুর্ধর্ষ অপরাধী। বর্তমানে আসাদুজ্জামান পলাতক রয়েছেন। তিনি ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা। শেখ হাসিনার আমলে তথাকথিত ক্রসফায়ারে যারা হত্যার শিকার হন বেশির ভাগই আসাদুজ্জামান ও তার ডান হাত হিসেবে পরিচিত এসপি আরিফুর রহমান মণ্ডলের হাতে হয়েছে। সাবেক আইজি শহীদুল আলমের নির্দেশে এবং পলাতক এসবি প্রধান মনিরুলের আশীর্বাদপুষ্ট তারা। আরিফুর রহমান মণ্ডল ছিলেন সিরাজগঞ্জের সাবেক এসপি।
র্যাবের গুম স্কোয়াডে আলেফ উদ্দিন ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ গুমকারী। তেমনি ছিলেন শাহ মোহাম্মদ মশিউর রহমান। গুমে জড়িত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী। তিনি র্যাব-২ দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। সিসিটিসির গুম স্কোয়াডে ছিলেন মাহতাব উদ্দিন ও ইশতিয়াক আহমেদ, ওবাইন, মেজবাহ উদ্দিন, আতিকুর রহমান চৌধুরী, আহমেদউল ইসলাম। তারাও অনেক গুমের সঙ্গে জড়িত। র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাকিল আহমেদ ও জসিম উদ্দিন এবং এডিসি ইমরানও গুমে জড়িত কর্মকর্তা।
সশস্ত্র বাহিনীর কেন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত
গুমের ঘটনায় বিভিন্ন সংস্থায় প্রেষণ বা ডেপুটেশনে কর্মরত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের অনেকের নাম এসেছে। এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে বক্তব্য ছিলÑডিজিএফআই ও র্যাব যেসব গুম করেছে তারা এর দায়িত্ব নেবে না। এ বিষয়ে গুম কমিশনের বক্তব্য হচ্ছে ডিজিএফআই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এটা ঠিক। প্রধানমন্ত্রীই প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকেন। সে হিসেবে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ থাকেন।
একইভাবে এনএসআইও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ। গুমের ঘটনায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনী দায়ী নয়। কিন্তু ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাবের এডিজিসহ কমান্ডিং অফিসারদের বেশিরভাগই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। যেসব কর্মকর্তা এ সংস্থাগুলোতে প্রেষণে বা ডেপুটেশনে এসেছেন, তাদের অনেকেই গুমের ঘটনায় সম্পৃক্ত। মূলত তারা সশস্ত্র বাহিনীরই অর্থাৎ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বক্তব্য হচ্ছেÑ গুটিকয়েক ব্যক্তির জন্য সেনাবাহিনী কিংবা সশস্ত্র বাহিনীর মতো দেশরক্ষা বাহিনী কলঙ্কিত হবে কেন? কলঙ্কিত অফিসারদের দায়ভার তারা কেন নেবে? সেনাবাহিনী কেন এ বোঝা বহন করবে? তাই সেনাবাহিনী বা সশস্ত্রবাহিনীর উচিত নিজস্ব তদন্ত সম্পন্ন করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এখনো যারা বাহিনীতে রয়েছেন, তাদের বের করে দেওয়া। না হলে তারা বাহিনীর জন্যই ঝুঁকির সৃষ্টি করবে।
র্যাবের গুম-খুন-নির্যাতন
গুমের জন্য র্যাবপ্রধানও দায়ী। সর্বাধিক গুম করেছে র্যাব এবং তাদের সদস্যরা। র্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন বা টিএফআই সেল র্যাব-১ সদর দপ্তরে অবস্থিত। এটিকে র্যাব একাধিক সংস্থার যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপন করত। বাস্তবে এটি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হতো র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সরাসরি তত্ত্বাবধানে। এটি র্যাবের মূল গোপন বন্দিশালা বা ‘আয়নাঘর’। যেমন জেআইসি ডিজিএফআইর মূল বন্দিশালা বা আয়নাঘর। র্যাবের টিএফআই সেলে হাজার হাজার মানুষকে দিনের পর দিন, মাস কিংবা বছর অন্ধকার কক্ষে চোখ ও হাত-পা বেঁধে আটকে রাখা হতো।
গুম কমিশনে ৩৮টি সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, এ কেন্দ্রে বন্দিদের পিটিয়ে, বিদ্যুৎ শক দিয়ে, উল্টো ঝুলিয়ে, মাথা ঘুরিয়েÑএমনকি শরীরের অঙ্গ ছিঁড়ে নির্যাতন করা হতো। শিশু ও মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরাও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি। নারীদেরও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হতো। এই সেলটির পরিচালনায় সেনা সদস্যরাই মূলত নিয়োজিত ছিলেন। তবে পুলিশের সদস্যরাও এসব অভিযানে অংশ নিতেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে র্যাবের অপহৃত বা ডিজিএফআইর হেফাজত থেকে আনা ব্যক্তিদের এই গোপন বন্দিশালায় আনা হতো। অনেক ক্ষেত্রে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া বা রেললাইনে শুইয়ে দেওয়া হতো, যাতে খোঁজ ও শনাক্তকরণ অসম্ভব হয়।
জিয়াউল আহসানের আরো নৃশংসতার কাহিনি
গুম খুনের কুখ্যাত নায়ক মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান একজন সিরিয়াল কিলার হিসেবে ১ হাজার ৩০টি খুন করার কাহিনি আমার দেশ-এ এর আগে প্রকাশ হয়েছে। তার নৃশংসতার আরো ঘটনা জানা গেছে। মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকের নির্দেশেই বেশির ভাগ গুম খুন তিনি করেছেন। তারিক সিদ্দিক নির্দেশ দিতে বিলম্ব করলেও জিয়াউল গুম করতে বিলম্ব করতেন না। বিশেষ করে র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান থাকাকালে বেশির ভাগ গুম খুন তিনি করেছেন। র্যাব ও এনটিএমসিতে তিনি সেনাবাহিনী থেকে বাছাই করে দুর্ধর্ষ প্রকৃতির (খুনি) কর্মকর্তাদের প্রেষণে আনতেন। দেখা যেতো র্যাব-১ দিয়ে গুম করাতেন, রাখতেন র্যাব-৪ এ, আর খুন করাতেন র্যাব-৭ দিয়ে। একবার বিজিবির লেন্স নায়ক নজরুল ইসলাম নামে একজন পালিয়ে গোপালগঞ্জে আত্মগোপন করে।
জিয়াউল আহসানকে তার পরিচিত এক কর্মকর্তা বিষয়টির খোঁজ নিতে বললে জিয়াউল আহসান তাকে তুলে এনে গুলি করে সুন্দরবনের নদীতে ফেলে দেন। ওই কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে নজরুল ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তার উত্তর ছিল, ‘সুন্দরবনে মাছের খাবার করে দিয়েছি।’ অথচ ওই কর্মকর্তা তাকে হত্যা করার কথা বলেননি। বরগুনার তাফালবাড়ির সংলগ্ন নদী এবং বরিশালের বিভিন্ন নদীতে নিয়ে গিয়ে অসংখ্য গুম হওয়া মানুষকে জিয়াউল আহসান হত্যা করেছেন। তিনি কিভাবে হত্যা করেন তা দেখাতে একদিন নদীতে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন। গোয়েন্দা নজরদারির জন্য জিয়াউল আহসান প্রথম ‘এনএমসি’ তৈরি করেন। পরে এটি ‘এনটিএমসি’ নাম হয়। এটি প্রতিষ্ঠার কোনো আইনগত বৈধতা নেই। এই প্রতিষ্ঠানে ইসরাইলের নিষিদ্ধ পেগাসাস প্রযুক্তি আনা হয়েছিল।
গুমের ক্ষেত্রে ২০০৯ থেকে ২০২৪ র্যাবের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তালিকাই দীর্ঘ। এই প্রতিষ্ঠানে জিয়াউল আহসানের ২০ থেকে ২৫ জন বিশ্বস্ত কর্মকর্তা আছে। জিয়াউল আহসান গুম খুনে ৫ থেকে ২০ জনের টিম নিয়ে ৪/৫টি গাড়িতে করে যেতেন। একদিনে তার সর্বোচ্চ ১৩ জনকে হত্যার রেকর্ড রয়েছে। জিয়াউল আহসানের কোর্সমেট ছিলেন কর্নেল মোস্তাফিজ। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। জিয়াউল আহসানের খুনের নেশা সম্পর্কে তিনি ৯ পর্বে বিভিন্ন কাহিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় জিয়াউল আহসান তারেক সাঈদকে ফাঁসিয়েছিলেন জেনারেল তারিক সিদ্দিকের ইশারায়। তার চক্রান্তেই নদীতে লাশ ভেসে ওঠে এবং তারেক সাঈদ এ ঘটনায় ফেঁসে যান। শুধু হাসিনা সিন্ডিকেটের গুমই নয়, জিয়াউল আহসান ভাড়াটে খুনি হিসেবে অনেক খুন করেছেন। পরকীয়া, জমিসংক্রান্ত ও ব্যবসায়িক বিরোধ এমনকি মাছের ব্যবসা এবং অন্যান্য বিষয়েও তিনি টাকার বিনিময়ে খুন করিয়ে দিতেন।
সত্য উন্মোচন, কার্যকর জবাবদিহি ও ১১ জেনারেলের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
গুম কমিশন থেকে বলা হয়েছে, তারা মনে করে গুমের ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ সত্য উন্মোচন ও কার্যকর জবাবদিহির মাধ্যমে এই অধ্যায়কে সঠিকভাবে শেষ না করতে পারা দেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর নিজেদের জন্যও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ দিয়ে গুম কমিশনেউল্লেখ করেছে, ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনাসমূহ। আইসিটি প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে গুমের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ১১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এই পরোয়ানা কমিশনের অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং প্রসিকিউশনের নিজস্ব তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে জারি করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন একাধিক সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা।
যেমন ডিজিএফআইর সাবেক ডিজি ও পরিচালক: লে. জেনারেল মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদীন, লে. জেনারেল মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল হামিদুল হক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তৌহিদুল ইসলাম। এই জেনারেলরা যখন ডিজিএফআইয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তখন ব্রিগেডিয়ার আজমি. লে. কর্নেল হাসিন, রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যারিস্টার আরমান, মাইকেল চাকমা এবং আরো অনেকে জেআইসিতে (মূল আয়নাঘর) আটক রাখা হয়েছিল। জেআইসির কার্যক্রম ডিজিএফআইর অধীনে ছিল।
যার নেতৃত্বে ছিলেন মহাপরিচালক এবং সিটিআইবির পরিচালক সরাসরি জেআইসির তত্ত্বাবধানে ছিল। কমিশন কমান্ড কাঠামো যাছাই করে নিশ্চিত হয় যে, ওই সময়কালে জেআইসিতে যে গুম সংগঠিত হয়েছে তা এই জেনারেলদের সরাসরি সম্মতি ছাড়া সম্ভব ছিল না। মেজর জেনারেল কবির আহমেদ গুম কমিশনকে জানান যে, তিনি ডিজিএফআইতে সিটিআইবির পরিচালক থাকাকালে নিজে ব্রিগেডিয়ার আজমির জেআইসিতে আটক নিয়ে ডিজিএফআইর দুজন ডিজি লে. জেনারেল সাইফুল আলম ও লে. জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেন। ডিজিএফআইর একজন জুনিয়র কর্মকর্তা জেনারেল কবির আহমদকে জানান, তৎকালীন সিটিআইবি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাযহার সিদ্দিকী তাকে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন, ব্রিগেডিয়ার আজমি ও মাইকেল চাকমা জেআইসিতে আটক আছেন এবং তিনি নিজে তাদের খাদ্য সরবরাহ করার জন্য নিযুক্ত ছিলেন।
গুম কমিশন থেকে জানা গেছে, অপরাধী জেনারেলদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সময় সব জেনারেলই অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন এলপিআরে ছিলেন। পলায়নের আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি কমিশন ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করলে তারা সেটা করে। ডিসেম্বরে জেনারেল আকবর সমনের জবাব দেওয়ার জন্য গুম কমিশনে হাজির হন। তিনি পাসপোর্ট বাতিলের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তার কথায় স্পষ্ট হয় যে, দেশছাড়ার কোনো সুযোগ না থাকায় তিনি কোণঠাসা অনুভব করছেন। তিনি কমিশনের সামনে দুবার উপস্থিত হন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আগে অনেকেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করছিলেন। ব্যতিক্রম ছিল মেজর জেনারেল আবেদীন। তিনি আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
এছাড়া সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে পরোয়ানা জারির আগেই বিষয়টি অবহিত করা হয়। তা সত্বেও পরোয়ানা কার্যকর হয়নি। ২০২৫ সালের মে মাসে কমিশন মেজর জেনারেল হামিদকে সমন জারি করে। ২১ মে ২০২৫ সেনাসদর দফতর কমিশনকে জানায় যে, একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ফোনে পাওয়া যায়নি এবং তাদের বর্তমান অবস্থান অজানা। সেনাবাহিনীর এই স্বীকারোক্তি এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দীর্ঘ সময়েও কার্যকর না হওয়ায় এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পালিয়ে গেছেন। যে সব ব্যক্তি ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দেশের ভেতরে ছিলেন এবং নিরাপদ ও সুপরিচিত স্থানে অর্থাৎ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে অবস্থান করছিলেন তারা এখন গুমের বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় নেই। এটা উদ্বেগের বিষয় যে, তাদের পাসপোর্ট আগেই বাতিল হয়, তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পরোয়ানা জারির বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়। এই সিনিয়র কর্মকর্তারা আইন প্রয়োগের সরাসরি আওতায় থাকলেও তাদের পলায়নে বাধা দেয়া হয়নি। এটা জবাবদিহিমূলক উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
গুমের কাঠামো ছিল তিন স্তরবিশিষ্ট পিরামিডের মতো
গুম কমিশন থেকে জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার আমলে গুমের যে কাঠামো চলমান ছিল, তা তিন স্তরবিশিষ্ট পিরামিডের মতো। পিরামিডের শীর্ষে ছিল কৌশলগত স্তর, যেখানে শেখ হাসিনা, জেনারেল তারিক সিদ্দিক, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যাদের গুম ও বিচারবহির্ভুত হত্যার আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা ছিল। এর নিচে ছিল নির্বাহী স্তর, যেখানে ছিলেন জ্যেষ্ঠ জেনারেল, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ সদস্য। এদের মাধ্যমেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশ সরাসরি বাস্তবায়নের পর্যায়ে আসতো এবং এই ব্যক্তিরাই সম্পৃক্ততার সাক্ষ্য দিতে সক্ষম।
সর্বনিম্ন স্তরে ছিল কার্যকর স্তর। নিরাপত্তা বাহিনীর নিম্নপদস্থ সদস্যরা যারা উপরের নির্দেশ অনুযায়ী অপারেশন পরিচালনা করতেন বা টিমে থাকতেন। এই প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, ডিজিএফআইর যেসব জেনারেল ছিলেন গুমের আদেশ দেয়ার সময় তারা কার্যত সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিশেষ করে শেখ হাসিনা ও জেনারেল তারিক সিদ্দিকের মধ্যবর্তী সংযোগকারীর ভূমিকায় ছিলেন। জেনারেল আকবর গুম কমিশনকে জানান যে, জেআইসির ভুক্তভোগী হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বিষয়টি তিনি সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। ডিজিএফআইর একজন জুনিয়র কর্মকর্তা কমিশনকে বলেন, তিনি নিজে পরিচালককে এক বন্দির ভবিষ্যত নিয়ে এমনভাবে কথা বলতে শুনেছিলেন তাতে স্পষ্ট ছিল, শেখ হাসিনা ওই বন্দি সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং এ বিষয়ে নিজস্ব মতও প্রকাশ করেছিলেন। যারা শেখ হাসিনার কমান্ড রেস্পন্সিবিলিটি প্রমাণ করতে পারতো, সে সাক্ষ্যদাতারা পালিয়েছেন।
দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলেছেন ড. নাবিলা ইদ্রিস
দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গুম কমিশনের সদস্যরা বলেছেন, গুমের সঙ্গে জড়িত অপরাধী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে এটা বাহিনীগুলোর ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলার পাশাপাশি দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির সম্মুখীন করবে। এজন্য যেসব বাহিনীতে বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীতে এখনো গুমের অপরাধী কর্মকর্তারা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে গুম কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস বলেন, গুমের অপরাধী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশের নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি হবে। তিনি বলেন, আইসিটি যে ১১ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল, তাদের পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ডিজিএফআইর সাবেক ডিজিরাও রয়েছেন। ফলে তাদের বিচারের সম্মুখীন করা যাচ্ছে না। তারা পালিয়ে যাওয়ায় যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে তা হলো- তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বৈরী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকে সরবরাহ করে দেবেন কিংবা ওই গোয়েন্দা সংস্থাই তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নেবে। এটা দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করবে।
নাবিলা ইদ্রিস বলেন, এদের পালিয়ে যেতে দেওয়ার মাধ্যমে বৈরী দেশের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে তাদের এক অর্থে সোপর্দ করা হয়েছে। অথচ তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা ছিল এবং তারা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টেই ছিলেন। সহজেই তাদের গ্রেপ্তার করা যেত। তিনি আরো বলেন, গুমের অপরাধী যারা চাকরিতে বহাল আছেন, তারা পদে পদে বৈরী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ব্লাকমেইলের শিকার হবে। তিনি যে গুমের জন্য অপরাধী সেটা যেন মানুষ জেনে না যায় সেজন্য বাঁচার লক্ষ্যে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করবে। সেটা সেনাবাহিনী কিংবা অন্যান্য বাহিনীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। যিনি একজন মেজর বা ক্যাপ্টেন আছেন এবং গুমের সঙ্গে জড়িত, তাদের লম্বা ক্যারিয়ার। তারা দেশকে ঝুঁকিতে ফেলে দেবে। এজন্য বাহিনীগুলোর উচিত হবে এদের বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া।
গুমের বিচার প্রসঙ্গে ড. নাবিলা ইদ্রিস বলেন, গুমের বিচারের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদের বিচার তো শুরু হয়েছে। গুমের অপরাধীদেরও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সেক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা বিলম্ব হবে।
No comments