Adsterra

লোড হচ্ছে...

৫১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম ১৪ কোটিতে করার অনুমোদন

৫১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম ১৪ কোটিতে করার অনুমোদন, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh,

দেশের সব উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ রাসেলের নামে এই স্থাপনা বানাতে প্রথম পর্যায়ে প্রতিটির পেছনে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫১ লাখ টাকা। কয়েক বছরের ব্যবধানে তা ২৮ গুণ বাড়িয়ে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ কোটির বেশি। গতকাল রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সব উপদেষ্টার আপত্তি সত্ত্বেও প্রকল্পটি পাস করিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় একনেক সভায় অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ব্যয় বেশি হওয়ায় সব উপদেষ্টাই প্রকল্পটি অনুমোদনের বিপক্ষে ছিলেন, কিন্তু উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একক অনুরোধ ও জোর প্রচেষ্টায় এটি অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম তৈরির জন্য শুরু হওয়া চলমান প্রকল্পটির ব্যয় ৭৩ শতাংশেরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। এর আগের নাম ছিল ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণ প্রকল্প।

বিভিন্ন নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলমান প্রকল্পটি দ্বিতীয় পর্যায়ের। এটি অনুমোদন পায় ২০২১ সালে। প্রতিটি মিনি স্টেডিয়াম তৈরির প্রথম সংশোধনীতে গড় ব্যয় ৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

                          ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন অনুসারে, আগের একটি প্রকল্পের অধীনে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে ১৩১টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ হয়েছিল, যার মোট ব্যয় ছিল ৬৬ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, প্রতিটির গড় ব্যয় ছিল প্রায় ৫১ লাখ টাকা। এর তুলনায়, চলমান প্রকল্পে প্রতি ইউনিট ব্যয় প্রায় ২৮ গুণ বেড়েছে। অর্থাৎ ২০১৯ সালে শেষ হওয়া প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পে প্রতিটি স্টেডিয়ামের ব্যয় হয়েছে ৫১ লাখ টাকায়, সেটি ২০২৫ সালে এসে একই কাজের খরচ দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি টাকায়।

ভূমি অধিগ্রহণ, জমি ভরাট, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, জমি-সম্পর্কিত বিরোধ এবং হারের সময়সূচিতে পরিবর্তনের মতো কারণ উল্লেখ করে, মন্ত্রণালয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম সংশোধন প্রস্তাব জমা দেয়, এতে ব্যয় ২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। কয়েক মাস পরে একটি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেখানে ব্যয় আবার ২ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় উন্নীত করে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

যেহেতু নতুন প্রস্তাব পূর্ববর্তী প্রস্তাবের তুলনায় ২৪৪ কোটি টাকা বেশি ছিল, কমিশন ব্যয় কিছুটা কমানোর সুপারিশ করে, কিন্তু সেগুলোও আমলে নেওয়া হয়নি। গত বছর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জমা দেওয়া প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাইয়ের নামে করা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই মাসে অনুমোদিত হয়েছিল, যার আনুমানিক ব্যয় ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনের সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ছিল ৪৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। কিন্তু প্রকল্পের ধীরগতির পরও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা সংশোধিত ব্যয়সহ দুই বছরের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করে। শেখ রাসেলের নাম অপসারণের পাশাপাশি, প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা বেড়েছে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই প্রকল্পের লক্ষ্য উপজেলা পর্যায়ে ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়ন করা, যাতে প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যায় এবং ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উপজেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতার জন্য মাঠ উন্নীত করা এবং তৃণমূল পর্যায়ে দক্ষ খেলোয়াড় তৈরির জন্য প্রতিভাদের খুঁজে বের করা প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রাক্কলন চিহ্নিত করেছেন।

বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে আমার দেশকে বলেন, প্রথমে ১৮৬টি উপজেলার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল, বিভিন্ন জটিলতার কারণে কিছু এলাকা বাদ দেওয়ার পরে এবং নতুন এলাকা যুক্ত করার পরে প্রকল্পটি ২০১টি এলাকা কভার করার জন্য সংশোধন করা হয়েছে। নির্মাণাধীন স্টেডিয়ামের সংখ্যা ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় ৭৩ দশমিক ১৩ শতাংশ ব্যয় বাড়ানো অস্বাভাবিকভাবে বেশি।

এত বেশি ব্যয় বাড়ল কেন সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, আমরাও বিষয়টি দেখেছি। তাই আমরা রেট শিডিউল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছি। রেট শিডিউলের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে এটি বাড়ানো হয়েছে কি না সেটি আমরা পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করেছি।

প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পে প্রতিটি স্টেডিয়ামে ৫০ লাখ টাকার স্টেডিয়ামের ব্যয় ১৪ কোটি টাকা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব আমার দেশকে বলেন, আগের প্রকল্পে খাস জমি ছিল। কিন্তু নতুন প্রকল্পে খাস জমি পাওয়া যায়নি। সেজন্য এখন ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পিডব্লিউ রেট শিডিউল ওই সময় ছিল ২০১৮ সালের, নতুন প্রস্তাবনার সময় তা হয়েছে ২০২২ সালের রেট শিডিউলের ভিত্তিতে। আগের নকশায় সীমানা প্রাচীর ছিল না, নতুন নকশায় তা যোগ করা হয়েছে। সেজন্য ব্যয় বেড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.