Adsterra

লোড হচ্ছে...

ক্ষমা মহৎ গুণ

ক্ষমা মহৎ গুণ,ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh

ক্ষমা মানব জীবনের অনন্য এক গুণ, যা ব্যক্তির সৌন্দর্য এবং সামাজিক সম্পর্কের পরিপূর্ণতায় অপরিহার্য। মানব সমাজে পারস্পরিক সংঘাত-সংঘর্ষ, ভুলত্রুটি, দ্বন্দ্ব-বিরোধ একেবারে নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ সবের জবাবে প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা যদি অগ্রাধিকার পায়, তবে সমাজে শান্তি, সহনশীলতা ও ভালোবাসার আবহ গড়ে ওঠে। ক্ষমা শুধু আত্মসংযম বা আত্মনিয়ন্ত্রণের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি মানুষের নৈতিক উচ্চতা, অন্তরের প্রশান্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম পথ।

ইসলামে ক্ষমার গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআন ও হাদিসে বারবার মানুষকে ক্ষমাশীল হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। মুত্তাকি বা পরহেজগার ব্যক্তির পরিচয়ের মধ্যেই ক্ষমা অন্যতম গুণ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ছিল ক্ষমা, দয়া ও সহনুভূতির শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। যারা তাকে কষ্ট দিয়েছে, অপমান করেছে, এমনকি তার জান নেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদেরও তিনি নিঃস্বার্থভাবে ক্ষমা করেছেন। তার এই ক্ষমার গুণই ইসলামকে একটি করুণাপূর্ণ, মানবিক ধর্ম হিসেবে বিশ্বমঞ্চে পরিচিতি দিয়েছে।

ক্ষমা মানুষকে শুধু আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে না, সামাজিকভাবে সম্মানিত ও মর্যাদাবানও করে তোলে। ক্ষমাশীল ব্যক্তি সমাজে শান্তির দূত হিসেবে বিবেচিত হন। আজকের পৃথিবীতে যখন সহিষ্ণুতা কমে যাচ্ছে, প্রতিশোধপরায়ণতা ও হিংসার আগুনে সমাজ জ্বলছে, তখন ক্ষমার মহিমা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ক্ষমা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের কল্যাণে অনিবার্য। এখানে ক্ষমা ও প্রতিশোধ না নেওয়ার গুরুত্ব, নৈতিক প্রভাব, নবীজির অনুপম দৃষ্টান্ত নিয়ে বিবরণী উল্লেখ করা হলো।

প্রতিশোধ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি : ‘আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ করো, তবে ওই পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদের কষ্ট দেওয়া হয়। যদি সবর করো, তবে তা সবরকারীদের জন্য উত্তম।’ (সুরা নাহল ১২৬)

বর্ণিত আয়াতের প্রথমাংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে, কারও আঘাতের মোকাবিলায় তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা জায়েজ, তবে এর সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, ‘ওই পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদের কষ্ট দেওয়া হয়।’ অর্থাৎ কারও আঘাতের মোকাবিলায় কথার আঘাত হোক বা শারীরিক আঘাত, পাল্টা যে আঘাতটা করা হবে তার মাত্রা প্রথম আঘাতের তুলনায় একটুও বেশি হতে পারবে না।

বলাবাহুল্য যে, এটি এমন এক শর্ত, যা রক্ষা করা নিতান্তই কঠিন। কারণ পাল্টা আঘাতটা সবসময় একটু বেশি মাত্রারই হয়ে থাকে। তাছাড়া রাগের মাথায় এত হিসাব করে কেউ প্রতিক্রিয়া করতে পারে না। বোঝা গেল, শরিয়ত প্রতিশোধ গ্রহণ করাকে যদিও জায়েজ বলেছে, কিন্তু সেটা আদৌ তার চাওয়া বা কাম্য বিষয় নয় অর্থাৎ শরিয়ত মানুষকে ক্ষমার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে আর প্রতিশোধ গ্রহণ করা থেকে নিরুৎসাহিত করেছে। আয়াতের শেষাংশ, ‘যদি সবর করো, তবে তা সবরকারীদের জন্য উত্তম’ থেকে এ বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। অতএব নিজের হক থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ক্ষমা প্রদর্শন করাই ইসলামের শিক্ষা।

ক্ষমা দ্বারা মর্যাদা বাড়ে : যখন আপনি কাউকে ক্ষমা করবেন, তখন নিজের ভেতরে অপার্থিব একটা প্রশান্তি অনুভব করবেন, সেই সঙ্গে সমাজের মানুষের কাছেও আপনার সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন।’ (সহিহ মুসলিম ২৫৮৮)

নবীজির ক্ষমাশীলতা : আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘আপনি ক্ষমা অবলম্বন করুন, ন্যায়ের আদেশ দিন এবং মূর্খ লোকদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ ১৯৯)

বাস্তবজীবনে নবী করিম (সা.) ছিলেন দয়া-মায়া ও ক্ষমার মূর্ত প্রতীক। তার জীবন ছিল ক্ষমা-উদারতায় ভরপুর। প্রতিশোধ গ্রহণের অবারিত সুযোগ পেয়েও তিনি ক্ষমা ও দয়ার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন জীবনভর। ইসলামের শত্রুদের ক্ষমার অযোগ্য অনেক অপরাধকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন পরম উদারতায়।

ক্ষমার প্রভাবে শত্রু বন্ধু হয়ে যায় : ক্ষমা এমন এক অদৃশ্য শক্তি, যা ঘোরতর শত্রুকেও মুহূর্তে আপন বানিয়ে দেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দিয়ে, ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’ (সুরা হামিম সেজদাহ ৩৪)

No comments

Powered by Blogger.