বৃষ্টিদিনের সাজ
বর্ষা মানেই আকাশ কালো করা মেঘ, ঝরঝর বৃষ্টি। কখনও আবার রোদ-মেঘের লুকোচুরি। রোদ-বৃষ্টি যাই হোক না কেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় শরীর থেকে ঘাম ঝরে। এ কারণে এমন দিনে মেকআপ নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা দ্বিধা থেকেই যায়। ঘাম, ভেজা ভাব, আর্দ্রতা সব মিলিয়ে সাজটা যেন ঠিক টিকে থাকতে চায় না। কখনও মেকআপ গলে পড়ে, কখনও আবার পুরো মুখ হয়ে যায় বিবর্ণ আর ক্লান্ত। অথচ প্রতিদিনের জীবনে একটু পরিকল্পনা আর সঠিক প্রসাধন বাছাই করে এই বর্ষাতেও মেকআপে থাকা যায় ঝকঝকে ও আত্মবিশ্বাসী।
মেকআপ শুরুর আগে
বৃষ্টি যেমন মাটি ভেজায়, তেমনি আমাদের ত্বকেও আর্দ্রতা এনে দেয়। সেই আর্দ্রতার সঙ্গে যদি সঠিক স্কিন কেয়ার না হয়, তাহলে মেকআপ সহজেই গলে যায়। এ কারণে মেকআপের আগে ত্বককে প্রস্তুত করে নেওয়া জরুরি।
ক্লিনজিং
বাইরে বের হওয়ার আগে ও পরে ত্বক পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষার ভ্যাপসা গরমে ধুলাবালু ও ঘাম জমে মুখে ব্রণ, র্যাশ বা অ্যালার্জি হতে পারে। তাই এমন ক্লিনজার ব্যবহার করুন, যা ত্বক পরিষ্কার করে আবার খুব শুকনোও করে না।
টোনিং
অ্যালকোহল ফ্রি টোনার ব্যবহার করলে ত্বকে বাড়তি তেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি মেকআপের জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রাইমারের কাজ করে।
অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার
ময়েশ্চারাইজার বর্ষায় অনেকেই বাদ দেন, এটি একেবারেই ভুল। ময়েশ্চারাইজার স্কিনকে ভেতর থেকে হাইড্রেট রাখে। তবে অয়েল ফ্রি বা জেল টাইপ হালকা ময়েশ্চারাইজার বেছে নেওয়াই ভালো।
প্রাইমার
অনেকেই প্রাইমার ব্যবহার করেন না। বর্ষার দিনে এই ছোট্ট পণ্যই মেকআপ লম্বা সময় ধরে রাখে। একটি ম্যাট প্রাইমার মেকআপ ত্বকে বসতে সাহায্য করে, তেল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ত্বক করে তোলে কোমল। প্রাইমার শুধু মুখে নয়, চোখের পাতাতেও একটু লাগিয়ে নিলে আইশ্যাডো অনেকক্ষণ ধরে থাকে।
বিবি/সিসি ক্রিম
এ ধরনের পণ্য স্কিনে হালকা কভারেজ দেয়, ত্বকের টোন ঠিক করে, আর ঘাম বা বৃষ্টিতে সহজে গলে পড়ে না।
ফাউন্ডেশন
যদি ফাউন্ডেশন লাগাতেই চান, তাহলে ওয়াটারপ্রুফ, ম্যাট ফিনিশ ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
কনসিলার
হালকা স্পট কভার করতে অল্প কনসিলার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কনসিলার যেন ক্রিজে না জমে, তাই সেটি ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
বর্ষার দিনে বাসা থেকে বের হলে যে কোনো সময়ে বৃষ্টি এসে আমাদের ভিজিয়ে দিতে পারে। এতে মেকআপ নষ্ট হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাজের সময় খেয়াল রাখতে হবে আমাদের মেকআপ যেন হালকা হয় এবং বেজটা যেন ঠিকঠাক থাকে ৷
অনেকের মুখেই পোর্সের সমস্যা থাকে। তারা মেকআপ নেওয়ার আগে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন অথবা বরফ দেবেন। এখানে বরফই বেশি কার্যকরী, তাহলে পোর্সগুলো থেকে অয়েল বের হয় না।
মেকআপ করার আগে প্রাইমারটা অবশ্যই লাগবে। প্রাইমার লাগানোর পর মুখ ঠিকভাবে শুকানোর জন্য সময় দিতে হবে। এরপর ময়েশ্চারাইজার দিতে হবে। ময়েশ্চারাইজার জেলবেজড হলে খুব ভালো হয়, এটি ত্বককে কোমল রাখবে।
বেজ মেকআপের ক্ষেত্রে যার যার স্কিন টোন অনুযায়ী ফাউন্ডেশন নিতে হবে। এটি আবার সবার ত্বকের জন্য এক হবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমরা যদি মেকআপ ওয়াটারপ্রুফ করতে চাই, তাহলে এর সঙ্গে সিরাম মিশিয়ে দিই। এভাবে ফাউন্ডেশন ত্বকের সঙ্গে ফিক্সড হয়ে লেগে থাকে।
ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পর ট্যাপ ট্যাপ করে লুজ পাউডার দিয়ে মেকআপ সেটিং স্প্রে করে দিতে হবে। সেটিং স্প্রে দিলে মেকআপের সব স্তরের সঙ্গে লুজ পাউডার ঠিকভাবে মিশে যাবে। তারপর হালকা করে হাইলাইটার বা ফেস শিমার পুরো মুখে দিলে মেকআপ মসৃণ হবে। ফাউন্ডেশন, লুজ পাউডার লাগানোর পর মুখের যে ফেইক ভাব আসে, সেটি তখন চলে যায়। আমরা যদি হালকা ব্লাশন দিই তাহলে মেকআপ সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে। তবে দিনের বেলায় খুব হালকা রঙের ব্লাশন বেছে নিতে হবে।
বর্ষাকালে খুব বেশি গরম থাকে না আবার ঠান্ডাও থাকে কম। তবে বৃষ্টির পর ভ্যাপসা গরমে সাবধান থাকতে হবে। এই সময়ে নাকের পাশে, ভ্রুর পাশে, থুতনিতে ফ্যাট সেল বেশি থাকায় একটু বেশি ঘেমে যায়। সে ক্ষেত্রে লুজ পাউডার বা ফেস পাউডার হালকা ওপরে দিয়ে দিলে এ জায়গাগুলোতে আর অয়েলি ভাব থাকবে না। পরে এ জায়গাগুলোতে হালকা হাইলাইটারও ব্যবহার করতে পারি। এভাবে আমরা প্রাকৃতিক একটি লুক পেতে পারি।
রূপ বিশেষজ্ঞ বলেন, আমি মনে করি বৃষ্টির দিনে চোখের মেকআপ খুব বেশি না দেওয়াই ভালো। চোখে আইলেশ, আইলাইনার দিয়ে হালকা আই মেকআপ নিলেও মানিয়ে যায়। দিনের বেলায় লিপস্টিক একটু কড়া দিলেই ভালো লাগবে। বৃষ্টির দিনে চুল খোলা রাখার ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বৃষ্টির পানি পড়ে চুলের স্টাইল নষ্ট হতে পারে। সাজের সঙ্গে চুলের সামনের দিকটায় ফ্রেঞ্চ বেণি করে পেছনের দিকটায় পনিটেইল করলেও দেখতে ভালো লাগবে। চুলের এমন স্টাইলে একটু মডেল লুক দেবে।
ব্যাগে রাখুন বর্ষাবান্ধব সাজসজ্জা
ব্লটিং পেপার, ট্রাভেল সাইজ মিরর, হালকা কমপ্যাক্ট পাউডার, ওয়েট টিস্যু, আপনার লিপস্টিক শেড, ছোট ছাতা বা রেইনকোট।
বর্ষা যতই চ্যালেঞ্জিং হোক না কেন, নিজেকে সুন্দর করে তোলার ইচ্ছে যেন কমে না যায়। বৃষ্টির দিনে সাজ হোক স্বাভাবিক, স্মার্ট আর আত্মবিশ্বাসী। সাজ কখনও কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, এটি আপনার আত্মবিশ্বাসেরও প্রতিফলন।
প্রসাধনীর যত্ন
গরম, আর্দ্র বা সরাসরি সূর্যের আলোয় প্রসাধনী রাখলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য ঠান্ডা ও শুকনো স্থানে রাখা উত্তম। ব্যবহার শেষে প্রতিটি পণ্যের ঢাকনা ভালোভাবে বন্ধ করে রাখতে হবে, যাতে বাইরের বাতাস বা ধুলাবালি ভেতরে ঢুকতে না পারে। মাশকারা, ফাউন্ডেশন, কনসিলার, লিপস্টিক ইত্যাদির একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী ব্যবহার করলে ত্বকে র্যাশ, ব্রণ বা চুলকানির মতো সমস্যা হতে পারে। তাই প্যাকেটের গায়ে লেখা মেয়াদ অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত। মেকআপ ব্রাশ ও বিউটি ব্লেন্ডার নিয়মিত পরিষ্কার করা অপরিহার্য। এগুলোয় প্রতিদিন ময়লা, তেল ও জীবাণু জমে থাকে। সপ্তাহে অন্তত একবার হালকা গরম পানিতে শ্যাম্পু বা মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে ধুয়ে নিলে সেগুলো পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত থাকে।
No comments