অকালমৃত্যু বলে কিছু নেই
কার কখন মৃত্যু হবে সেটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। এই নির্ধারিত সময়ের এক নেনো সেকেন্ড আগে কিংবা পরে কারও মৃত্যু হবে না। কারও সাধ্য নেই এই সময় বিলম্বিত করা কিংবা এই সময় এগিয়ে নিয়ে আসা। গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়, কারও কারও মৃত্যুতে লেখা হয়, ‘তার অকাল মৃত্যু হয়েছে’।
অকাল মৃত্যু বলতে বোঝায়, একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক বা প্রত্যাশিত আয়ু শেষ হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হওয়া। এটি এমন এক ধরনের মৃত্যু, যা সাধারণত অপ্রত্যাশিত, অনাকাক্সিক্ষত এবং বয়সের তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি ঘটে। অথচ এই পুরো ব্যাপারটি ইসলামের সঙ্গে যায় না। কারণ ইসলাম বলেছে, মৃত্যু যে কোনো সময়, যে কোনো বয়সে আসতে পারে। সেটা শিশু হোক, যুবক কিংবা বৃদ্ধ হোক। যে বয়সেই মৃত্যু আসুক না কেন সেটাকে অকাল মৃত্যু বলা যাবে না। বয়সের তুলনায় আগে মৃত্যু হতেই পারে। বৃদ্ধ হওয়ার পর মৃত্যু হলে তা অকাল মৃত্যু হবে না, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মৃত্যুর ফায়সালা একমাত্র আল্লাহর কাছে। আল্লাহ বলেছেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (সুরা নাহল ৬১) কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করো। (সুরা নিসা ৭৮)
বুদ্ধিমান তো সেই, যে মৃত্যুর কথা প্রতিনিয়ত স্মরণ করে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে পাপ থেকে বাঁচায়। মৃত্যুর স্মরণের কথা হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে উল্লেখ করেছেন। সাহাবিরা মৃত্যুর স্মরণে হাউমাউ করে কাঁদতেন। আল্লাহপ্রেমে মশগুল মানুষ মাত্রই মৃত্যুর স্মরণে ভীত হয়।
হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জীবনের স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো। (জামে তিরমিজি) অপর হাদিসে এসেছে, জনৈক সাহাবি হজরত রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি কারা? তিনি জবাব দিলেন, যারা মৃত্যুর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করে এবং এ জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। দুনিয়া-আখেরাতে তারাই সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরিহিত হবে। (মুজামুল কাবির)
দুনিয়ার এই ক্ষণিকের জীবন মুমিনের জন্য কারাগার স্বরূপ। তার জীবন কাঁটায় ভরা। নানাভাবে আল্লাহ তাকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়-ভীতি ও ক্ষুধা-অনাহার দ্বারা এবং জান-মাল ও ফল-ফসলাদির (ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে) ক্ষতি দ্বারা। এরূপ অবস্থায় (যারা ধৈর্যের সঙ্গে এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে) তুমি সেসব ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা ১৫৫)
এই আয়াত দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যায়, বিপদ এলে কী করতে হবে। বিমান দুর্ঘটনায় অনেক শিশু প্রাণ হারাল। এই শোক হৃদয়কে বিদীর্ণ করে তোলে। যার সন্তান মারা গেছে সে জানে এটা কতটা কষ্টের। তবু কঠিন হলেও সন্তান হারানোর বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। আল্লাহর ফয়সালাই সব। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করার তওফিক দান করুন। আমিন।
No comments