বর্ষায় চোখের সংক্রমণ এড়াতে কী করবেন
বর্ষার সময়ে বাড়তি আর্দ্রতা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ চোখের নানা সংক্রমণের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। ভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিস থেকে শুরু করে স্টাই পর্যন্ত—চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, এই সময় চোখের সংক্রমণ রোধে পরিচ্ছন্নতাই সবচেয়ে বড় উপায়।
সবচেয়ে সাধারণ সংক্রমণগুলোর একটি হলো ভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিস। অনেকেই এবে ‘আই ফ্লু’ নামে চেনেন।
এই রোগ দ্রুত ছড়ায়, বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও অফিসে। এর উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে—চোখ লাল হয়ে যাওয়া, পানি পড়া, ফোলা, স্রাব হওয়া এবং চোখে আঠালো ভাব তৈরি হওয়া।
চিকিৎসকদের মতে, আই ফ্লু অন্যের দিকে তাকিয়ে ছড়ায় না। এটি ছড়ায় সংক্রমিত নিঃসরণের সংস্পর্শে এসে।
তাই হাত পরিষ্কার রাখা, চোখে হাত না দেওয়া এবং তোয়ালে বা রুমাল ভাগাভাগি না করাই সংক্রমণ রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
বর্ষাকালে চোখের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হলো, কনজাঙ্কটিভাইটিস ও স্টাই। স্টাই আসলে চোখের পাতায় হওয়া একটি ছোট ফোঁড়া বা পুঁজভরা ফুসকুড়ি। যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়।
অন্যদিকে, ভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিস অত্যন্ত সংক্রামক এবং সহজেই ছড়ায়। বিশেষ করে যখন হাত পরিষ্কার রাখা হয় না বা তোয়ালে-রুমাল ভাগাভাগি করা হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিস নিজে থেকেই এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, গুরুতর সংক্রমণ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অনেক সময় এটি কর্নিয়াকেও প্রভাবিত করে, ফলে ঝাপসা দেখা বা আলো ঘিরে হ্যালো তৈরি হতে পারে—এ অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস বা অ্যালার্জি-আক্রান্ত রোগীরা বিশেষভাবে সাবধানে থাকবেন। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে এবং চোখ ঘন ঘন ঘষার কারণে বারবার স্টাই বা সংক্রমণে ভোগেন।
তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত হাত ধুতে হবে, চোখ ঘষা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং কখনোই রুমাল, তোয়ালে বা বালিশ ভাগাভাগি করা যাবে না।
সংক্রমণ ছড়ালে রোগীদের উচিত বাড়িতে থাকা, আরাম পাওয়ার জন্য ডার্ক গ্লাস ব্যবহার করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ কঠোরভাবে মেনে চলা। পাশাপাশি যারা রোগীর যত্ন নেবেন বা চোখের ড্রপ দেবেন, তাদেরও হাত ভালো করে পরিষ্কার রাখা আবশ্যক।
সার্জারির ক্ষেত্রে বর্ষা নিয়ে এখনো নানা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। চিকিৎসকরা জানান, অনেকের মনে ধারণা আছে যে বর্ষাকালে ক্যাটারাক্ট অপারেশন করা অনুচিত। আগে যখন সেলাই দিতে হতো, তখন এ নিয়ে ঝুঁকি ছিল। কিন্তু এখনকার আধুনিক পদ্ধতিতে খুবই ছোট কাটা দিয়ে অপারেশন করা হয়, যা একেবারেই নিরাপদ—যদি রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানা হয়।
No comments