Adsterra

লোড হচ্ছে...

চাঁদাবাজি একটি সামাজিক অভিশাপ

চাঁদাবাজি একটি সামাজিক অভিশাপ ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh,

চাঁদাবাজি অত্যন্ত ঘৃণিত ও গর্হিত অপরাধ, ভয়ানক দস্যুতা এবং সংঘবদ্ধ সামাজিক মহামারি।


ইসলামের দৃষ্টিতে চাঁদাবাজি সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ। চাঁদাবাজি, এতে সহযোগিতা করা ও নির্দেশ দেওয়া সবই ন্যক্কারজনক মহাপাপের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে দেশের প্রতিটি জনপদ। সামাজিক প্রতিটি সেক্টর ও সব সংস্থায় নতুন নতুন পদ্ধতিতে চাঁদাবাজির আড়ালে চলছে ডাকাতি, দস্যুতা ও বর্বর হত্যা-নির্যাতন। গুটি  কয়েক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছাড়া দেশের সব মানুষই তাদের কাছে জিম্মি। পরিবহন সেক্টর, নির্মাণ খাত, ব্যবসাবাণিজ্য, চিকিৎসা খাত, শিক্ষা বিভাগ, আইনি সহায়তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ জনগণ রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজদের বেপরোয়া আচরণে অনেকেই আজ হুমকির সম্মুখীন। ডোনেশন, কালেকশন, সেলামি, কমিশন, টিপস, ফি, বকশিশ, সাহায্য, সম্মানি ইত্যাদি শিরোনামে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ দুর্নীতির ভয়ংকর ফাঁদ। ডাক্তারের সম্মানি বর্তমানে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার চক্রান্তে রোগী ও তাদের অভিভাবকরা বর্তমানে দিশাহারা। প্রাইভেট বিদ্যালয়গুলোতে চলছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি এবং রমরমা শিক্ষা বাণিজ্য। প্রতি বছর ভর্তি ফি, সেশন ফি, পোশাক, ইউনিফর্ম, ভ্রমণ ফি, কোচিং এবং আরও যে কত নামে চাঁদবাজি চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, তা দেখার যেন কেউ নেই এ দেশে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তেমন ভেদাভেদও নেই। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে এসবই নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না।’ (সুরা বাকারা-১৮৮)। চাঁদা উত্তোলনকারী, সহায়ক ও চাঁদা গ্রহণকারী সবাই ওই পাপের সমান অংশীদার। সবাই অত্যাচারী-জালিমের সহযোগী অথবা সরাসরি জালিম। যারা এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদেরও এ মহাপাপ থেকে দায়মুক্তির সুযোগ নেই। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার সম্মতি ছাড়া কারও জন্য বৈধ হবে না।’ (দারা কুতনি)। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘অনুমতি ব্যতীত কারও পশু কেউ দোহন করবে না।’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম)।


চাঁদাবাজি করার ক্ষেত্রে চাঁদাবাজরা হুমকিধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, ত্রাস সৃষ্টি করে, হত্যা-খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে- এসবই সামাজিক অভিশাপ। কোরআন-হাদিসে প্রতিটি অপকর্মের জন্য ইহ ও পরকালে কঠিন শাস্তি ঘোষণা করেছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও রসুলের বিরুদ্ধাচরণ এবং দেশে সন্ত্রাস-অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাদের শাস্তি হচ্ছে- তাদের হত্যা করা হবে অথবা ফাঁসিতে ঝোলানো হবে অথবা তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হবে অথবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি হলো তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা মায়িদাহ-৩৩)।


রসুলুল্লাহ (সা.) একদিন তাঁর সাহাবাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কি জানো, নিঃস্ব কে?’ তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ওই ব্যক্তি, যার কাছে কোনো দিরহাম এবং কোনো সামগ্রী নেই। তিনি বললেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কেয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও পর্যাপ্ত জাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে। সঙ্গে এমন পরিস্থিতি উদ্ভব হবে যে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারও সম্পদ ভক্ষণ করেছে, কারও রক্তপাত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। অতঃপর এসবের বিনিময়ে কাউকে তার কিছু নেকি দেওয়া হবে। অপরজনকে কিছু নেকি দেওয়া হবে, এভাবে পাওনাদারের দাবি পূরণের আগেই তার সব নেকি শেষ হয়ে যাবে। তখন তাদের পাপের বোঝা ওই ব্যক্তির ওপরে তারা নিক্ষেপ করবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম)। পরকালে পাওনাদারের পাওনা পরিশোধের পদ্ধতি হবে খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতি। যারা সেদিন পাকড়াও হবে তাদের মুক্তির কোনো উপায় হবে না। থাকবে না পার পাওয়ার কোনো সুযোগ। তাই এ পৃথিবীতে থাকাকালীন সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। প্রয়োজন দায়মুক্ত হওয়া। পরকালে পাওনা পরিশোধ করা খুবই কঠিন। সেদিন ক্ষমা নেওয়ারও কোনো উপায় থাকবে না। থাকবে না কোনো ক্ষমতার দাপট।

                          ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

পরিচ্ছন্ন হৃদয় ও আন্তরিক সন্তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা সম্পদ কারও জন্য বৈধ হবে না। পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অথবা অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক আদায় করা সম্পদ মানেই হারাম, যা চাঁদাবাজির অন্তর্ভুক্ত। এসব কাজে যে বা যারা জড়িত তাদের অবশ্যই তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসতে হবে। ওই সম্পদের মালিক অথবা তার উত্তরাধিকারীর কাছে তাদের সব পাওনা যে কোনো উপায়ে ফেরত দিতে হবে। তা অসম্ভব হলে তার নামে ওই সম্পদ সদকা করতে হবে। অন্যথায় কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে পরকালে শেষ বিচারের দিন। 


No comments

Powered by Blogger.