Adsterra

লোড হচ্ছে...

যে বই অনুপ্রেরণা হয়ে শক্তি জোগায়

 

যে বই অনুপ্রেরণা হয়ে শক্তি জোগায়, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh,

বাঙালি কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়? না, কেউ স্বাধীনতাহীনভাবে বাঁচতে চায় না। স্বেচ্ছায় কেউ দাসত্ব শৃঙ্খল পরতে চায় না। মানুষ চিরকাল স্বাধীনতাপ্রত্যাশী। ভাগ্যচক্রে বা চক্রান্তে পড়ে স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে পরাধীনতা স্বীকার করতে হলেও সে শৃঙ্খল ভাঙতে চায়, আবার স্বাধীন হতে চায়। এর জন্য নিজের জীবনকে বাজি ধরতেও সে দ্বিধা করে না। কারণ মানুষমাত্রেই জানে, পরাধীন মানুষের জীবন, বেঁচে থাকা প্রকৃতপক্ষে মানুষের মতো বেঁচে থাকা নয়, খাঁচাবন্দি পশুর জীবন। তাই বন্দি জীবনকে বাজি ধরে সে মুক্ত স্বাধীন জীবনের আশায়। মানুষের এই উপলব্ধি যেমন প্রাচীন তেমনি বন্ধন ছিন্ন করে মুক্ত স্বাধীন জীবন অর্জনের দৃষ্টান্তও কম নয়। তার কিছু সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত, কিছু কল্পনার আশ্রয়ে রচিত যা সত্যের অধিক। এই অনুপ্রেরণাদায়ী গাঁথাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রখ্যাত রুশ সাহিত্যিক লিও টলস্টয়ের ‘ককেশাসের বন্দি’।

প্রতিকূল পরিবেশে জীবনযাপনে অভ্যস্ত রুশ জাতি কোনো প্রতিকূলতাকেই ভয় পায় না। বরফ পড়া ঠা-ার ভেতর সংগ্রামী জীবন তাদের। যেমন স্বাধীনচেতা তেমনি কঠোর পরিশ্রমী। তাদের বিভিন্ন সংগ্রাম নিয়ে নানা কাহিনি রচিত হয়েছে। ককেশাসের বন্দি গল্পের ঝিলিন রুশ সেনাবাহিনীর তেমনি এক স্বাধীনচেতা অফিসার। সুরক্ষিত ককেশাসের দুর্গে দায়িত্বরত অবস্থায় মায়ের চিঠি পায় সে। অনেক দিন ধরে যুদ্ধে থাকার কারণে মাকে দেখতে যেতে পারেনি ঝিলিন। মা তাকে একটিবার দেখতে যেতে লিখেছেন সেই চিঠি। কিন্তু বাড়িতে যাওয়া সহজ নয়।

তখন রুশদের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধ চলছে তাতারদের। রুশ সৈনিকরা সুরক্ষিত দুর্গের ভেতর থেকে তাতারদের মোকাবিলা করছে। দল বিচ্ছিন্ন হয়ে বাইরে বের হলে সংঘবদ্ধ তাতাররা আক্রমণ করে বন্দি করে নিয়ে যায় তাদের গ্রামে আর অকথ্য অত্যাচার করে মুক্তিপণ আদায় করে। সে জন্যই রুশ সৈনিকরা ইচ্ছা থাকলেও বাড়িতে যেতে পারে না। ঝিলিন যেহেতু অনেক দিন ছুটি নেয়নি তাই সে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে ছুটি পেল। সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একদিন রওনা হলো। নিরাপত্তার স্বার্থে তারা দলবদ্ধ হয়ে পথচলার কৌশল অবলম্বন করল। কিন্তু বাড়ির যাওয়ার সময় সময় যেন থমকে যায়, আরও দ্রুত পথচলার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে মানুষ। দলবদ্ধ অবস্থায় এই কাফেলাকে বারবার থামতে হচ্ছিল। আর সে জন্য মনে মনে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিল ঝিলিন। তার সঙ্গে আরেকজন অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছিল, সে হলো কস্তিলিন। এই অফিসার ঝিলিনের কাছে প্রস্তাব করল কাফেলার দল ছেড়ে শুধু দুজনে এগিয়ে যেতে। ঝিলিন রাজি হলো। তখনো তাদের জানা ছিল না এই হঠকারিতার ফল কি ভয়াবহ হতে যাচ্ছে!

কিছু দূর যাওয়ার পরে তারা তাতারদের একটি দলের চোখে ধরা পড়ে যায়। তাতাররা তাদের ধাওয়া করে এবং বন্দি করে ফেলে। ঝিলিন ও কস্তিলিন যদিও প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিল এবং ঘোড়া ছুটিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু মাত্র দুজন হওয়ায় তাতারদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। তাতাররা রুশ সৈনিকদের ধরে মেরে ফেলত না। তাদের বন্দি করে রেখে বাধ্য করত পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চেয়ে চিঠি লিখতে। মুক্তিপণ পৌঁছতে দেরি হলে নেমে আসত অবর্ণনীয় অত্যাচার। ঝিলিন তা জানত। সে জন্যই ধরা পড়ার থেকে মৃত্যুকে বেশি প্রার্থনীয় বলে মনে করেছিল। কিন্তু তা মনে করলে কী হবে, আহত অবস্থায় ধরা পড়ে বন্দি হতে সে যখন বাধ্য হলো তখন সে প্রথমে মনে করেছিল মুক্তিপণের জন্য চিঠি লিখবে না। কারণ তার বিধবা মায়ের পক্ষে এত অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়। সে জন্য সে পাঁচশ রুবলের বেশি দিতে লিখতে রাজি হয়নি। তার জেদের কাছে নতি স্বীকার করে তার তাতার মালিককে অবশ্য রাজি হতে হয় পাঁচশ রুবলে। কিন্তু এর মাঝেও ঝিলিন একটি বুদ্ধি করে। সে ভুল ঠিকানায় চিঠিটি পাঠায়। ফলে সে নিশ্চিত থাকে যে, তার মুক্তিপণ এসে পৌঁছবে না। মুক্তিপণ এসে পৌঁছতে দেরি হলেও তাতাররা অত্যাচার করত। এই অত্যাচার থেকে বাঁচতে ঝিলিন অন্যদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে শুরু করে এবং তাদের টুকটাক কাজ করতে শুরু করে।

এভাবে সে তাতারদের মধ্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে পড়ে এবং পায়ে বেড়ি বাঁধা অবস্থায় গ্রামের ভেতরে চলাচলের অনুমতি পায়। বন্দি থাকলেও সে মুক্তজীবনের আশা ছাড়েনি। তাই পরিকল্পনা করতে থাকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। মুক্তির এই পথ সহজ ছিল না। এর জন্য তাকে বুদ্ধি, কৌশল, অধ্যবসায়, পরিশ্রম আর ঝুঁকি নিতে হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত সে কি মুক্তি পেল আর পেলেও কীভাবে তা জানতে পড়তে হবে ককেশাসের বন্দি বইটি। বইটি জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে শক্তি জুগিয়েছে তা জানিয়েছেন অনেক বিখ্যাত মানুষই। বইটি তোমাদের ভালো লাগবে।

No comments

Powered by Blogger.