Adsterra

লোড হচ্ছে...

নারীদের বয়স বাড়লে বাড়ে রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ

নারীদের বয়স বাড়লে বাড়ে রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,

প্রায়ই মানুষকে বলতে শোনা যায়, ‘মেয়েমানুষের এত রাগ ভালো না’। আবার অনেক বয়স্ক নারী তরুণ নারীদের বলে থাকেন, ‘বয়স হোক, এমনিতেই রাগ কমে যাবে’। এই যে রাগের সঙ্গে বয়সের সম্পর্ক, এটা সমাজ অনেক সময় ঠিক করে দিতে চায়। কিন্তু আদৌ কি রাগের মাত্রা কিংবা রাগ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে লিঙ্গ কিংবা বয়সের কোনো সম্পর্ক আছে?

‘রাগ’ শব্দটা শুনলেই মাথায় আসে ঝগড়া, অপমান, কষ্ট বা অশান্তি। কিন্তু রাগ আসলে মানবিক অনুভূতির একটি স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের এক গবেষণায় উঠে এসেছে নারীদের রাগের পরিবর্তন নিয়ে চমকপ্রদ কিছু তথ্য।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের মধ্যে রাগের মাত্রা বাড়ে। কিন্তু একই সঙ্গে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতাও বাড়ে।

এই গবেষণার প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বাংলাদেশের নারীদের জীবনের দিকে নজর দিই, তাহলে দেখা যাবে, আমাদের সমাজে নারীদের আবেগ, এখনো একটা ‘টেবু’। বিশেষ করে সংসারজীবন, সামাজিক দায়িত্ব, কর্মজীবন, সন্তান লালনপালন ও বার্ধক্যে প্রবেশ—প্রতিটি পর্যায়েই নারীদের অনুভূতি অনেক সময় চেপে রাখতে হয়। এককথায় বলা চলে, এখনো এখানে চুপ থাকা শেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই আবেগ দমন না করে একে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় জানা জরুরি।

ওয়াশিংটনের গবেষকেরা ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী নারীদের ওপর গবেষণা করেন। তাঁরা নারীদের ঋতুচক্র, মানসিক অবস্থা ও রাগ প্রকাশের ধরন পর্যালোচনা করেন। সেখানে দেখা যায়, বয়স ও প্রজননসম্পর্কিত পরিবর্তন; যেমন মেনোপজ বা পেরিমেনোপজ এই বিষয়গুলো নারীদের মধ্যে রাগের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। তবে তারা ধীরে ধীরে সেই রাগ প্রকাশের মাত্রা কমিয়ে আনতে শেখে। বাংলাদেশেও নারীরা ৩৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে প্রবেশ করার পর জীবনের নানা ধরনের মানসিক চাপে পড়েন। স্বামী-সন্তান, পেশা, শারীরিক পরিবর্তন, সামাজিক প্রত্যাশা—সবকিছুই মানসিক চাপ বিভিন্নভাবে বাড়িয়ে তোলে। পেরিমেনোপজ বা মেনোপজ চলাকালে হরমোনের ওঠানামা তাঁদের মেজাজে সরাসরি প্রভাব ফেলে। অথচ আমাদের দেশে এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনো যথেষ্ট কোনো আলোচনা নেই।

মানসিক স্বাস্থ্য ও রাগ নিয়ন্ত্রণ আমাদের সমাজে অবহেলিত এক বাস্তবতা। বাংলাদেশে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য এখনো প্রাধান্য পায় না। রাগ প্রকাশকে নারীদের জন্য অপমানজনক বা দুর্বলতার পরিচয় হিসেবে দেখা হয়। মেয়েরা হবে ‘শান্ত, সংযত ও সহনশীল’। এই ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত। তাই একজন নারী যখন পরিবারে বা কর্মক্ষেত্রে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, তখন তাঁকে ‘ঝগড়াটে’, ‘উগ্র’ বা ‘সংসার না জানে’ বলেও মন্তব্য শুনতে হয়। ফলে নারীরা ধীরে ধীরে তাঁদের আবেগ নিজের মধ্যে আটকে রাখতে শেখেন। এর ফল হয় মানসিক চাপ, হতাশা অথবা শারীরিক অসুস্থতা। অথচ এই রাগ যদি সঠিকভাবে বোঝা ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে এটি একধরনের শক্তি হিসেবেও কাজ করতে পারে। এটি পরিণত হতে পারে আত্মবিশ্বাস, প্রতিবাদ ও পরিবর্তনের উৎস হিসেবে।

নারীদের এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে শিক্ষা ও সচেতনতা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষণাটির বিশেষজ্ঞ ড. মনিকা ক্রিসমাস বলেন, ‘মেনোপজ ও পেরিমেনোপজের সময় নারীদের মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে শিক্ষিত করা হলে জীবনমানের ওপর তা গভীর প্রভাব ফেলে।’ এটি আমাদের দেশের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। স্কুল-কলেজ, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মস্থল কিংবা পরিবার—সবখানেই নারীদের আবেগ নিয়ে ইতিবাচক আলোচনার প্রয়োজন। নারীদের শেখানো উচিত, রাগ করা অস্বাভাবিক নয়, বরং সেটা কীভাবে প্রকাশ করা যায়, তা জানা জরুরি। একইভাবে পরিবার ও সমাজকেও নারীর মানসিক পরিবর্তন ও আবেগগত প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে সহনশীল হতে হবে।

                          ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

কী করা যেতে পারে

প্রজনন ও মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম চালু করা।

হাসপাতালগুলোতে হরমোন ও মেজাজ পরিবর্তনসংক্রান্ত কাউন্সেলিং চালু করা।

কর্মস্থলে নারী কর্মীদের আবেগগত চাহিদা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা।

নারী নেতৃত্বে পরিচালিত ‘সাপোর্ট গ্রুপ’ তৈরি করা।

আরো পড়ুন মেয়েরা আড্ডায় যেসব বিষয়ে গল্প করে

নারীদের আবেগগত জগৎ অত্যন্ত জটিল ও সংবেদনশীল। গবেষণা বলছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীরা রাগ নিয়ন্ত্রণে আরও দক্ষ হয়ে ওঠে। তবে তার মানে এই নয় যে তাদের রাগ কমে যায়; বরং তারা ধীরে ধীরে বুঝে নেয়, কোথায় কীভাবে তা প্রকাশ করতে হবে। নারীর রাগ কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটা তার আত্মপরিচয়ের অংশ। বিষয়টি সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। রাগ চেপে না রেখে, বুঝে ও সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করাই নারীর সুস্থ ও শক্তিশালী জীবনযাপনের উপায় হয়ে ওঠা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.