Adsterra

বিশ্ব অর্থনীতিতে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব কেমন

 

বিশ্ব অর্থনীতিতে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব কেমন, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news,

পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে সংঘাতের তীব্রতা। এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী এই অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রধান সামরিক শক্তির এই সংঘাত যখন পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে, তখন এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক আর্থিক খাত ও বিমান পরিবহন শিল্পে। ইসরায়েলের আকস্মিক হামলায় গত শুক্রবার ইরানে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে শেয়ারবাজারে, যদিও পরে তা কিছুটা স্থিতিশীল হয়। তবে যুদ্ধ যত তীব্র হচ্ছে, ততই বাড়ছে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা।


তেলের বাজারের পরিস্থিতি কী

গত শুক্রবার ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান। আর এরপরই লাফিয়ে বাড়ে তেলের দাম। গতকাল সোমবার সকালে ব্যারেলপ্রতি ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৬০ ডলারে। যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি জ্বালানির বাজারে বড় প্রভাব ফেলবে।

এদিকে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, বিশ্বের মোট সামুদ্রিক জ্বালানি পরিবহনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যাতায়াত করে হরমুজ প্রণালি দিয়ে।

ইরান ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মাঝখানে অবস্থিত এই সংকীর্ণ জলপথ আরব সাগরকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল তেল এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। সংকীর্ণতা ও গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে হরমুজ দীর্ঘদিন ধরে একটি সামুদ্রিক ‘চোকপয়েন্ট’ হিসেবে বিবেচিত।

এই প্রণালি বন্ধ করলে বিশ্ববাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ইরানও এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের ভাষ্য, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে বাধাগ্রস্ত হবে ইরানের রপ্তানি—বিশেষ করে চীনে তাদের তেল সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে, যা তেহরানের জন্য এক বিশাল রাজস্ব ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিএস লমবোর্ডের অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হামজাহ আল গাউদ বলেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে তা ইরানের জন্যই ভয়াবহ হতে পারে।

১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধেও হরমুজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। যদিও সে সময় উভয় পক্ষই উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছিল।


                          ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে বীর শহিদ ও অকুতোভয় আন্দোলনকারীদের স্মরণে ও সম্মানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস বাংলা বসন্ত। অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কি প্রভাবিত হয়েছে

তেলের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এর প্রভাব সরাসরি পড়ে ভোক্তার ওপর—বিশেষ করে খাদ্য, পোশাক ও রাসায়নিকের মতো জ্বালানিনির্ভর পণ্যে। ফলে বিশ্বজুড়ে তেল আমদানিকারক দেশগুলোকে একযোগে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞেরা সতর্ক করছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে। টিএস লম্বার্ডের বিশ্লেষক হামজাহ আল গাউদ বলেন, ‘জি-৭-ভুক্ত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকারেরা বর্তমানে সুদের হার কমানোর চক্রে রয়েছেন। কিন্তু এই অবস্থায় জ্বালানি বাজারে মূল্যস্ফীতি তাঁদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি নীতি সুদহার কমিয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ এখনো সুদ কমাতে নারাজ, কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত নতুন শুল্কনীতি এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়িয়ে তুলেছে।


শেয়ারবাজার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে শেয়ারবাজার। গত শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিটে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ দশমিক ১ শতাংশ এবং নাসডাক কম্পোজিট ১ দশমিক ৩ শতাংশ হ্রাস পায়। মধ্যপ্রাচ্যে গত রোববার মিসরের বেঞ্চমার্ক ইজিএএক্স ৩০ সূচক পড়ে যায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, আর তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ ৩৫ সূচক কমেছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।

ইসরায়েলের হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ইউরোপের বাজারেও পতন দেখা দেয়। গত সপ্তাহের শেষে জার্মানির ডিএএক্স ও ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক উভয়ই কমেছে ১ দশমিক ১ শতাংশের একটু বেশি, আর যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক গত শুক্রবার দিনের শেষে কমে যায় ০ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে কিছু ব্রিটিশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। প্রতিরক্ষা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিএই সিস্টেমসের শেয়ারমূল্য প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে লকহিড, নর্থরপ গ্রুম্যান ও আরটিএক্সের মতো সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদরও বেশ বেড়েছে। অপরদিকে জ্বালানি খাতে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম ও শেলের শেয়ারে যথাক্রমে প্রায় ২ ও ১ শতাংশের বেশি উত্থান দেখা যায়।

স্বর্ণের দাম গত শুক্রবার বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্স ৩ হাজার ৪২৬ ডলারে, যা এপ্রিলের রেকর্ড ৩ হাজার ৫০০ ডলারের কাছাকাছি। তবে গতকাল সোমবার তেল ও স্বর্ণের দাম কিছুটা কমলে শেয়ারবাজারে আবারও উত্থান দেখা যায়।

টিএস লম্বার্ডের বিশ্লেষক হামজাহ আল গাউদ বলেন, বাজার পরিস্থিতি থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন এই সংঘাত সীমিত পরিসরেই থাকবে।


বিমান চলাচল খাতে কী প্রভাব

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ফলে একাধিক রাষ্ট্র তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইতিমধ্যে বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তি তো হচ্ছেই, ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে এয়ারলাইনগুলোকে।

মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইনস এমিরেটস জানিয়েছে, তারা ইরাক, জর্ডান, লেবানন ও ইরানের সঙ্গে ৩০ জুন পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করেছে। তবে লেবাননে আপাতত আগামী রোববার পর্যন্ত ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। ইতিহাদ এয়ারওয়েজ আবুধাবি ও তেল আবিবের মধ্যকার সব ফ্লাইট আগামী রোববার পর্যন্ত বাতিল করেছে এবং অন্যান্য গন্তব্যের জন্য বিকল্প রুট ব্যবহার করছে। কাতার এয়ারওয়েজ সাময়িকভাবে ইরান, ইরাক ও সিরিয়ার ফ্লাইট বাতিল করেছে। চলমান উত্তেজনার মধ্যে যাত্রীদের ফ্লাইটের অবস্থা যাচাই করে তবেই যাত্রা করতে বলা হয়েছে।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, দেশটির বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় আকাশসীমা বন্ধ থাকবে। ইরাকও শুক্রবার থেকে তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে সব ধরনের বিমান চলাচল স্থগিত করেছে। পূর্ব ইরাক অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত আকাশপথগুলোর একটি—এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বহু ফ্লাইট এই পথেই চলাচল করে।

জর্ডানের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আঞ্চলিক উত্তেজনার কারণে সম্ভাব্য বিপদের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অস্থায়ীভাবে আকাশসীমা বন্ধ করেছে তারাও। টিএস লম্বার্ডের হামজাহ আল গাউদ মনে করছেন, পর্যটনে স্বল্পমেয়াদি ধাক্কা লাগলেও তা মাসখানেকের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। একইভাবে, যদি হামলা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে, তাহলে শেয়ারবাজারও গত সপ্তাহের পতন কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.