পালটা হামলায় তছনছ ইসরাইল
গর্জে উঠেছে ইরান। শুক্রবার ইসরাইলের হঠাৎ আক্রমণে কোণঠাসা ইরান ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই ইসরাইলি হামলার পালটা হামলা শুরু করে দেশটি। ভোরে বড় আকারের হামলা শুরু করে তেল আবিব, জেরুজালেমসহ ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলে। শনিবার ভোরেও চলেছে হামলা-পালটা হামলা। এ পালটা হামলা এখনই থামছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এক ইরানি কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ‘পালটা হামলার এ সীমিত পদক্ষেপে এই সংঘাত শেষ হচ্ছে না। ইরানের হামলা চলতেই থাকবে এবং এ প্রতিক্রিয়া আগ্রাসনকারীদের জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও পরিতাপের হবে।’ আলজাজিরা, বিবিসি, সিএনএন।
ইরানের বিপুল ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের একাধিক সামরিক ঘাঁটি, রাডার সিস্টেম ও অস্ত্রাগার ধ্বংস হয়ে গেছে। তেল আবিব, আশদোদ ও বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের আশপাশে বিস্ফোরণে কম্পিত হয় ইসরাইলের রাতের আকাশ। ইরান এই হামলাকে ‘ন্যায়সঙ্গত প্রতিশোধ’ বলে ঘোষণা দিয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত হয় ইসরাইলের শুক্রবার রাতের আচমকা বিমান হামলা থেকেই। এ রাতে ইরানের সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে ইসরাইলি বিমান। এর জবাবেই পালটা হামলা শুরু করে ইরানও। প্রথমে ড্রোন হামলা, এরপর ইসরাইলের দিকে একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে শুরু করে দেশটি। এসব হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের দূত বলেছেন, দুই দেশের পালটাপালটি হামলায় মোট ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় ইরানে ৮০০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরাইলের ৪ জন নিহত ও ১৫০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইরানের হামলার আতঙ্কে বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুনরায় খোলার জন্য এখনো কোনো দিন বা তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। ইরানের হামলাও এতই তীব্র ছিল যে ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন দূত মাইক হাকাবি শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত পাঁচবার নিরাপদ জায়গায় সরেছেন। সিএনএন জানিয়েছে, ইসরাইলে ইরানের পালটা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে বারবার জায়গা বদল করেছেন তিনি। ইরানের এ পদক্ষেপে সাধুবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বিনাশাস্তিতে যে পার পাওয়া যায় না, তা ইরান প্রমাণ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল রিশেক।
শুধু ইসরাইলেই হামলা নয়, যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ওপরও এবার গর্জে উঠেছে ইরান। ইসরাইলের ওপর ইরানের হামলা ঠেকাতে সহায়তা করলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের ঘাঁটি ও জাহাজে হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি। বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত কোনো সামরিক পদক্ষেপে জড়ায়নি বলে জানা গেছে। তবে এ হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ঘাঁটি কিংবা অবকাঠামোর ওপর হামলা চালায় তবে তাদের পরিণতি শোচনীয় হবে। এরই মধ্যে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ শনিবার ইরানকে নতুন হামলা নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরান যদি ইসরাইলে আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তবে পালটা হামলা চালিয়ে তেহরানকে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। দুই দেশের পালটাপালটি হামলা বন্ধে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে তিনি বলেছেন, যথেষ্ট হয়েছে, এখন থামার সময় হয়েছে।
No comments