ইরানের মাটি থেকেই হামলা চালায় মোসাদ কমান্ডোরাও
ইরানে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে শুক্রবার ভোররাতে ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইসরাইল। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানের ভেতর থেকেই এ হামলা পরিচালনা করেছে। শুধু তাই-ই নয়; ইসরাইলের বিমানবাহিনীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই সময়ে ইরানের ভূখণ্ড থেকেই তেহরানের বেশ কয়েকটি লক্ষবস্তুতে হামলা চালিয়েছে মোসাদও। জেরুজালেম পোস্ট, টাইমস অব ইসরাইল।
ইসরাইলি নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, মোসাদের কমান্ডোরা ইরানের অভ্যন্তরে গোপনে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেছিল। এরপর সেগুলো সক্রিয় করে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। কয়েক বছর ধরেই ভয়াবহ এ হামলার পরিকল্পনা চলছিল। মার্কিন নিউজ পোর্টাল এক্সিওসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৮ মাস ধরেই ইরানের মাটিতে এই ভয়ংকর হামলার জাল বুনছিল মোসাদ। ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার আগেই ইরানে নিজেদের কামান্ডো বাহিনী পাঠিয়েছিল মোসাদ। পূর্বপরিকল্পিত এ হামলায় নিমিষে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করে দেয় মোসাদ। ইসরাইলের গণমাধ্যম নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, রাতারাতি ইরানের ওপর তিনটি সমন্বিত অভিযানের প্লট আগেই তৈরি হয়েছিল। বিমান হামলা শুরু হওয়া মাত্রই একসঙ্গে গর্জে ওঠে মোসাদ।
বিশেষ মোসাদ ইউনিটের প্রবেশ
ইরানের ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্ভুলভাবে মোতায়েনের জন্য বিশেষ মোসাদ ইউনিট ইরানে প্রবেশ করে। ইসরাইলি বিমানবাহিনী যখন হামলা শুরু করে, তখন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সক্রিয় করা হয় এবং হামলা চালানো হয়।
বেসামরিক যানবাহনে স্ট্রাইক সিস্টেম
মোসাদ গোপনে ইরানজুড়ে বেসামরিক যানবাহনে প্রযুক্তিগতভাবে আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। অস্ত্র ব্যবস্থা বহনকারী যানবাহন ইরানে পাচার করা হয়েছিল। অভিযান শুরু হলে, তারা তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে শক্তিশালী অস্ত্র নিক্ষেপ করে।
ইরানের অভ্যন্তরে গোপন ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন
মোসাদ ইরানের কেন্দ্রস্থলে বিস্ফোরক-বোঝাই ড্রোনের একটি গোপন ঘাঁটি স্থাপন করে। হামলার অনেক আগে সেগুলো পাচার করা হয়। ভোর রাতের হামলার সময় ইরানের ভু পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সক্রিয়ভাবে পাঠানো হয়। ইসরাইলের নিরাপত্তা সূত্র ইসরাইল ন্যাশনাল নিউজকে জানিয়েছে পরিকল্পনাগুলো ‘বছরের পর বছর ধরে তৈরি’ ছিল। মোসাদ ‘ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি করার জন্য হামলা চালিয়েছিল।’
অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদক বারাক ডেভিড একজন ঊর্ধ্বতন ইসরাইলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘ইসরাইলি বিমানবাহিনীর ব্যাপক বিমান হামলার পাশাপাশি, মোসাদ ইরানের গভীরে একাধিক গোপন নাশকতামূলক অভিযান পরিচালনা করেছে। এই অভিযানগুলো ইরানের কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা এবং এর বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে করা হয়েছিল।’
ইরানের মাটিতে মোসাদের অতীত হামলা
এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ইরানের ভূখণ্ড থেকেই দেশটিতে হামলা চালিয়েছে মোসাদ। ২০১৮ সালে ইরানের পারমাণবিক সংরক্ষণাগার জব্দ করার ক্ষেত্রেও জড়িত ছিল সংস্থাটি। ২০২৪ সালের এপ্রিল ও অক্টোবরে ইরানের হামলায়ও গোপনে কার্যক্রম চালিয়েছিল মোসাদ। ইরান ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযানের অভিযোগ এনেছে। ২০২০ সালের জুলাই এবং ২০২১ সালের এপ্রিলে নাতানজে এবং জুনে কারাজে দুটি পৃথক পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার অভিযোগ করেছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে তাদের পারমাণবিক প্রধান মোহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যা করার অভিযোগ করা হয়েছে মোসাদের বিরুদ্ধে।
No comments