Adsterra

শিশুর সার্বিক বিকাশে প্যারেন্টিংয়ের গুরুত্ব

শিশুর সার্বিক বিকাশে প্যারেন্টিংয়ের গুরুত্ব, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla news, bangladesh news

একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই সে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। শিশু মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এর মূল কারণ, এতদিন মায়ের গর্ভে ছিল সে নিরাপদ পরিবেশে, হঠাৎ পৃথিবীর আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এসে তার প্রথম অনুভূতি জাগে নিরাপত্তাহীনতা। তাই সে চিৎকার করে তার অভাববোধের কথা জানায়। শিশুর অভাববোধ পূরণের লক্ষ্যে মাতৃত্বের সবটুকু দরদ উজাড় করে মা শিশুটিকে কোলে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন। শিশুটি তার নিরাপত্তাটুকু ফিরে পায়। সে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এতেই বোঝা যায় যে, একটি শিশু জন্মের পরই তার নিরাপদ আশ্রয়স্থল বা নিরাপত্তার প্রধান উৎস তার মা। সংগত কারণেই প্যারেন্টিং-এর মূল দায়িত্ব হচ্ছে পিতা-মাতার। ধীরে ধীরে সে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার চিন্তাচেতনার বিস্তৃত ঘটে। তখন তার আশ্রয় ও ভরসাস্থল হিসাবে পায় তার পরিবারকে।

প্যারেন্টিং ইংরেজি শব্দ। এর মূলকথা হচ্ছে সন্তান লালনপালনে মা-বাবার ভূমিকা। প্যারেন্টিং মূলত একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সন্তানের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতা সম্পর্কে শিক্ষাদান। এ শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার সময়কাল শিশুকাল থেকে যৌবনকাল পর্যন্ত। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত পিডিয়াট্রিশিয়ান এবং সাইকোলজিস্ট ডোনাল্ড উইনিকোট বলেছেন, ভালো প্যারেন্টিংয়ের অর্থ হচ্ছে জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে শিশুর প্রতিটি মুহূর্তের ডেভেলপমেন্টের অর্থাৎ অগ্রগতির বা উন্নতির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা। এবার মূল আলোচনায় আসি। প্যারেন্টিংয়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নের শুরু ভ্রূণ থেকে। গর্ভে সন্তান এলেই মায়েদের ব্যালেন্স ডায়েট, সদা হাসিখুশি থাকা উচিত। ডাক্তার দ্বারা নিয়মিত চেকআপ করা। ঢিলেঢালা পোশাক পরা। গর্ভবতী মায়ের ওপর কোনো ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি না করা ইত্যাদির প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হয়। যেহেতু মায়ের কথা, কাজকর্ম, চিন্তাভাবনা গর্ভস্থ শিশুর ওপর প্রভাব পড়ে। তাই গর্ভবতী মাকে পজিটিভ চিন্তাচেতনায় অভ্যস্ত হতে হবে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে মায়ের শাল দুধ পান করা অত্যাবশ্যকীয়। প্রসূতি মা এবং সদ্যজাত সন্তানকে কুসংস্কারমুক্ত পরিবেশে রাখতে হবে।


এরপর আসে শিশুদের ব্রেস্ট ফিডিংয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রসঙ্গ। কেননা, যেসব শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করে বেড়ে ওঠে, তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা, সহিংসতার মাত্রা অনেক কম দেখা যায়। ফলে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর যে শারীরিক, মানসিক, আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়, তা তাদের সুস্থ বিকাশে সহায়ক। অনেক মা তার শিশুকে দুধের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত ও কৃত্রিম দুধ পান করাচ্ছেন। এটি ধূমপান ও মাদকসেবনের মতোই শিশুর জন্য অভিশাপ। অজ্ঞতার কারণে প্রকারন্তরে মায়েরা প্রক্রিয়াজাত ও কৃত্রিম দুধের নামে মূলত শিশুকে বিষপান করাচ্ছে। তাই সন্তান ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে প্যারেন্টিংয়ের ভূমিকা যথাযথ পালন করতে হবে।


এখনকার সময়ে প্যারেন্টিং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে, মা-বাবা যা বলেন সন্তানরা তা পালন করে না। বরং মা-বাবাকে সন্তানরা যা যা করতে দেখে তা-ই তারা করে। তারা শুনে শেখার চেয়ে, দেখে দেখে শেখে বেশি। কেননা, শিশুরা মূলত অনুকরণপ্রিয়। সন্তানরা যদি দেখে বড়রা বয়োজ্যেষ্ঠদের শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন, বড়দের আদেশ নির্দেশাদি মেনে চলেন তবে সন্তানরাও তাদের অনুকরণে বড়দের মান্যগণ্য করবে, সম্মান করবে। যেহেতু, প্যারেন্টিং হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে ধর্মীয় নীতিনৈতিকতা জ্ঞানের প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য এই যে, পরিবার শিক্ষাঙ্গন, সমাজ কোথাও নেই আগের মতো নৈতিকতা ও ধর্মজ্ঞান শিক্ষার পরিবেশ। সমাজে বাড়ছে অনৈতিকতা, ধর্মান্ধতা ও মূল্যবোধের সীমাহীন অবক্ষয়। বাড়ছে নানা মানসিক-দৈহিক অসুস্থতা ও হিংস্রতা। এর মূল কারণ, পারিবারিকভাবে ধর্মের শাশ্বত শিক্ষার ঘাটতি। তাছাড়া সমাজে বিনোদনের ধরন পালটে গেছে। শিশুরা পাচ্ছে না মুক্ত খেলার মাঠ। শিশুদের মাঝে তাই লোপ পেয়েছে বিনোদনের সুস্থ চর্চা। তাছাড়া পাঠ্যবহির্ভূত বই পড়ার সংস্কৃতিও প্রায় লোপ পেয়েছে। মুঠোফোনে বিনোদন, কম্পিউটার, ভিডিও গেমস আরও কত কি শিশুদের আনন্দের উৎস হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির অবাধ লাগামহীন ব্যবহার তাদের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সন্তানরা মূলত প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানুষের মাঝে থেকেও হয়েছে বিচ্ছিন্ন।


আমাদের অন্তর্গত সত্তা মানবীয় গুণাবলিতে পরিপূর্ণ। তাই কল্যাণকর এবং মানবীয় গুণগুলো বিকশিত করতে হবে। সততা, পরিশীলিত কথা, কাজ ও আচরণে সন্তানরা যাতে আকৃষ্ট হয়। ঘরের পরিবেশ হতে হবে প্রাণময় ও উচ্ছ্বাসমুখর। এতে সন্তানদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের গুণ গড়ে উঠবে। এতে অভিভাবকও হয়ে উঠবেন সন্তানের ভরসাস্থল, অনুপ্রেরণার উৎস। মোদ্দা কথা, সন্তানদের কাছে রোল মডেল হিসাবে তাদের মনে দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্থান করে নিতে হবে। প্যারেন্টিং-এর চেয়ে ভালো বিনিয়োগ আর নেই। এর মাধ্যমে সন্তানই মা-বাবার জন্য এনে দিতে পারে পরিতৃপ্তি, সম্মান, শান্তি-প্রশান্তি, সমৃদ্ধি সব কিছু।


ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
লেকচারার, জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.