ইস্পাহান অর্ধেক পৃথিবীখ্যাত মুসলিম শহর
ইস্পাহান তেহরান শহরের ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী। ইসলামী স্থাপত্য, ছাদঢাকা সেতু, মসজিদ ও মিনারের অসাধারণ সৌন্দর্য আজও ইস্পাহানকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে রেখেছে।
ইস্পাহানের সৌন্দর্য কিংবদন্তিতুল্য। শহরটিকে একসময় বলা হতো ‘ইসফাহান নাসফ-ই জাহান’ যার আক্ষরিক অর্থ ‘ইস্পাহান অর্ধেক বিশ্ব’।
এটি দুবার ইরানের রাজধানী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। আখেমেনীয় বা হাখমানেশী সাম্রাজ্যের সময় থেকে কাজার রাজবংশের শেষ পর্যন্ত একটি দীর্ঘ সময়ব্যাপী ইস্পাহানের ইতিহাস বিস্তৃত। এই ব্যাপ্তিকালজুড়ে ইস্পাহান অনেক উত্থান ও পতনের মধ্য দিয়ে সর্বমোট ১৪টি ভিন্ন সাম্রাজ্য দ্বারা শাসিত হয়েছে। একসময় ইস্পাহান বিশ্বের বড় শহরগুলোর অন্যতম ছিল।
১০৫০ থেকে ১৭২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল এর সমৃদ্ধিকাল। সাফাভি সাম্রাজ্যের সময় ইস্পাহান শৌর্যের শীর্ষে পৌঁছে। মোঙ্গলদের হামলায় ইরানের অন্য শহরের মতো ইস্পাহান শহরটিও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তার পরও শাহ আব্বাস সাফাভি তাঁর শাসনামলে নিজেদের রাজধানী শহর হিসেবে ইস্পাহানকে নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে পুনরায় শহরটির হারানো ঐতিহ্য ও ঐশ্বর্য ফিরিয়ে আনেন। সে সময় ইউরোপ ও দূরপ্রাচ্য থেকে যেসব বাণিজ্যিক কাফেলা বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যের উদ্দেশে গমনাগমন করে ইস্পাহান তাদের কাছে ব্যাপক আকর্ষণীয় বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিগণিত হয়। আব্বাসী বংশের শাসক আল-মানসুরের আগে ইস্পাহান অল্পদিনের জন্য আরবদের পদানত ছিল। সেলজুক বংশের মালিক শাহের শাসনামলে এসফাহন পুনরায় রাজধানীর মর্যাদা পায়। দার্শনিক ইবনে সিনা ১১শ শতকে ইস্পাহানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। ত্রয়োদশ শতকে মঙ্গোলদের অভিযানে বেশির ভাগ অধিবাসী গণহত্যার শিকার হয়।
শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প। সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন
১৩৮৭ সালে তৈমুর লং পুনরায় ইস্পাহানে অভিযান চালালে শহরটি অনেকাংশে তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। কিন্তু সাফাভি শাসনামলে ইস্পাহানের পার্ক, পাঠাগার, মসজিদ, স্থাপনা ইউরোপীয়দের অবাক করে দেয়। এ সময় ইস্পাহানে ১৬৩টি মসজিদ, ৪৮টি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৮০১টি দোকান এবং ২৬৩টি হাম্মামখানা নির্মিত হয়।
ইস্পাহান শহর বর্তমানে জায়নামাজ, শতরঞ্জি ও গালিচা, বস্ত্র, ইস্পাত এবং বিবিধ হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনের চুল্লি আছে। ইউরেনিয়ামকে এখানে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইডে পরিণত করা হয়।
ইস্পাহানের অনুকূল অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গড়ে উঠেছে ২০০০টির বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ইরানের বড় খনিজ তেল শোধনাগার ও গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি এখানে অবস্থিত। ইরানের সবচেয়ে উন্নত উড়োজাহাজ তৈরির কারখানাও এখানে অবস্থিত। এখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। ২০০৭ সালে ইস্পাহানে আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রিটিশ পর্যটক রবার্ট বায়রন এথেন্স বা রোমের মতো বিরল স্থানগুলোর সঙ্গে ইস্পাহানকে স্থান দিয়েছেন। এর ইতিহাস ও চিত্তাকর্ষক স্থাপত্যের কারণে শহরটিকে ‘ইরানের লুকানো রত্ন’ও বলা হয়ে থাকে।



No comments